‘জঙ্গি নেতা’ জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি!

আন্তর্জাতিক ‘জঙ্গি’ সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাকিস্তানি নাগরিকসহ গ্রেফতার হওয়া সেই আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক শফিউল্লাহ এখন জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি।

২৯ জুলাই পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ‘জঙ্গি, সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি’র সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন তিনি। একই সাথে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার প্রগতিশীল লোকজন ওসাংস্কৃতিক কর্মীদের না জানিয়েই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে শফিউল্লাহর পক্ষের অনুসারীরা তাকে ‘জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটি’র সভাপতি মনোনীত করেন। আর এ নিয়ে সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটির প্রধান করায় এটাকে হাস্যকর, হঠকারী ও দলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন দলের স্থানীয় নেতারা।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবু তাহের কোম্পানি বলেন, ‘শফিউল্লাহ জঙ্গি অভিযোগে অভিযুক্ত। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এমন একজনকে জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটিতে রাখা যায় কিনা আমারও প্রশ্ন।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটি পক্ষ এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ক্যউচিনং চাক বলেন, ‘২৯ জুলাই সভায় উপস্থিতদের অধিকাংশ অধ্যাপক শফিউল্লাহকে সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করে। তবে অধ্যাপক শফিউল্লাহ সভাপতি মনোনীত হওয়ায় আমিও উদ্বিগ্ন। বিষয়টি আমি জেলা নেতাদের অবহিত করেছি। জেলা নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল লর্ডস থেকে এক পাকিস্তানি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করে, আটক পাঁচজন আরএসও নেতা। শফিউল্লাহর নেতৃত্বে আরএসও কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফান্ড সংগ্রহ নিয়ে হোটেল লর্ডস-এ তারা গোপন বৈঠক করছিল বলে সেই সময় অভিযোগ ওঠে। অবশ্য এর আগে থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় সফিউল্লাহ জঙ্গি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, অধ্যাপক শফিউল্লাহ ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংগঠনের জন্য অবৈধভাবে পাঠানো হুন্ডির টাকা গ্রহণ ও তা বিতরণের মূল দায়িত্ব তারা পালন করে আসছেন। গত পাঁচ বছর ধরে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের তদবীরের কারণে সেসব প্রতিবেদন চাপা পড়ে আছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শফিউল্লাহ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ওই বছরই উপজেলা সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব হন। ২০১২ সালে শফিউল্লাহ উপজেলা কমিটির মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। একই বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করে হেরে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক শফিউল্লাহ বলেন, একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি কখনো জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ আইনে যে মামলাটি ২০১৪ সালে হয়েছিল সেটিও নিস্পত্তি হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘অধ্যাপক শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় কোনো অভিযোগ নেই। তবে সন্ত্রাস ও নাশকতা আইনে চট্টগ্রামে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি আমার জানা নেই।’খবর দ্য রিপোর্টের।



মন্তব্য চালু নেই