জন্মের প্রথম দিনে নবজাতকের প্রয়োজনীয় যত্ন

পাঁচ বছরের কম বয়সী যত শিশু মারা যায়, তার মধ্যে ৬১ শতাংশই মারা যায় জন্মের প্রথম মাসে এবং মোট নবজাতকের মৃত্যুর অর্ধেকই ঘটে জন্মের প্রথম দিনে। এর বড় কারণ নবজাতকের যথাযথ যত্ন না নেওয়া।

নিরাপদ ও পরিষ্কার প্রসবের জন্য

• নিরাপদ ও পরিষ্কারভাবে নাড়ি বাঁধা ও কাটা। এ জন্য ডাক্তারের সহায়তা নেওয়া উচিত।

• নবজাতকের শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা বজায় রাখা। মায়ের পেটে শিশু খানিকটা উষ্ণ পরিবেশে থাকে। তাই জন্মের পর পর শিশুকে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হবে।

• জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে মোছানো। এতে শিশুর পরিচ্ছন্নতার বিষয় নিশ্চিত হয়।

• জন্মের পর তিন দিন পর্যন্ত গোসল না করানো। অনেকেই জানেন না বলে গোসল করিয়ে উল্টো নিউমোনিয়াসহ অসুখ-বিসুখ ডেকে আনেন।

• নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাস যাচাই করা এবং কোনো সন্দেহ হলে বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে ডাক্তারের সহায়তা নেওয়া।

• শিশুকে বারবার স্পর্শের মাধ্যমে উদ্দীপ্ত করা। এতে শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ঠিক থাকে, স্লিপ এপনিয়াসহ মারাত্মক কিছু অসুখ থেকে শিশু রক্ষা পায়।

• ব্যাগ ও মাস্কের সাহায্যে প্রয়োজনে রিসাসিটেশন করা।

• জন্মের সঙ্গে সঙ্গে (এক ঘণ্টার মধ্যে) মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করা এবং ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধই খাওয়ানো।

• কম জন্ম-ওজন এবং অপরিণত নবজাতকের বাড়তি বিশেষ যত্ন নেওয়া।

নাড়ির সঠিক যত্ন

জীবাণুমুক্ত সুতা ও ব্লেড দিয়ে নাড়ি বাঁধা ও কাটার পরপরই নাভির কাটা অংশে ৭.১% ক্লোরোহেক্সিডিন দ্রবণ লাগাতে হবে। পরবর্তী সময় নাভি উন্মুক্ত রেখে নাড়িতে আর কোনো কিছুই লাগানো যাবে না।

উষ্ণ রাখা

শিশু জন্মের পরপরই দ্রুত তাপ হারাতে থাকে। ফলে শিশুর তাপমাত্রা কমে যায়। তাই নবজাতককে জন্মের পরপরই উষ্ণ রাখা প্রয়োজন। এ জন্য জন্মের পরপরই একটি পরিষ্কার ও শুকনো নরম সুতি কাপড় দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নবজাতককে মুছে শুষ্ক করে, ভেজা কাপড় সরিয়ে আরেকটি পরিষ্কার শুকনা কাপড় বা কম্বল দিয়ে মা ও শিশুকে ঢেকে দিতে হবে। নবজাতকের মাথা টুপি বা কাপড় দিয়ে ঢেকে তাকে মায়ের বুকে ত্বকে ত্বক সংস্পর্শে রাখতে হবে।

বুকের দুধ খাওয়ানো

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে, অবশ্যই এক ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়াতে হবে। শালদুধে অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। অন্য কোনো খাবার, এমনকি এক ফোঁটা পানি খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই। জন্মের পরপরই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মাকে যথাযথ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

নবজাতকের বিপদচিহ্ন

জন্মের প্রথম ২৮ দিন পর্যন্ত নবজাতকের যেকোনো শারীরিক সমস্যা বা অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি খুব বেশি থাকে। নবজাতকের মারাত্মক অসুস্থতার উপসর্গকেই বিপদচিহ্ন বলে।

এগুলো হচ্ছে-

• মায়ের দুধ খেতে না পারা বা না চোষা

• খিঁচুনি

• শান্ত অবস্থায় দ্রুত শ্বাস নেওয়া (মিনিটে ৬০ বার বা তার চেয়ে বেশি)
• বুকের খাঁচার নিচের অংশ মারাত্মকভাবে দেবে যাওয়া

• শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা জ্বর (৩৭.৫ ডি. সে. বা ৯৫ ডি. ফা.র কম)

• নেতিয়ে পড়া বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম নড়াচড়া করা (উদ্দীপ্ত করা ছাড়া শিশু নড়াচড়া করে না অথবা একেবারেই নড়াচড়া করে না)

• নাভি পাকা ও চারপাশ লালবর্ণ ধারণ বিপদচিহ্নে

করণীয়

• নবজাতকের উল্লিখিত যেকোনো একটি বিপদচিহ্ন থাকলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

• ২০০০ গ্রামের কম জন্ম-ওজনের নবজাতককে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই