জব্দ শত শত মোটরসাইকেল, সংখ্যা কত কেউ জানে না

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) আওতায় মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনে কর ও ফি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় বিআরটিএর টাকা জমা নেওয়ার কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় বিপাকে পড়েছে মোটরসাইকেল মালিকরা। এদিকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করছে পুলিশ। শত শত মোটরসাইকেল জব্দ করে বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।

গত ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এ সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। অতি সম্প্রতি এ পত্রটি চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএর কার্যালয়ে পৌঁছেছে।

জানা যায়, প্রতিটি ১০০ সিসি মোটরসাইকেলে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্যসহ ৮ হাজার ১৬৩ টাকা এবং সড়ক কর ৫ হাজার ৭৫০ টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ১৩ হাজার ৯১৩ টাকা জমা দিতে হতো। বর্তমানে পুনর্নির্ধারণ করা হিসাব অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য (এককালীন) ৮ হাজার ১৬৩ টাকা এবং সড়ক কর (প্রথম কিস্তি) ১ হাজার ১৫০ টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ৯ হাজার ৩১৩ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর পরবর্তী ৮ বছরে কিস্তিপ্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা হারে ৪টি সমান কিস্তিতে ৪ হাজার ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে।

আর প্রতিটি ১০০ সিসির । ঊর্ধ্বের মোটরসাইকেলে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য ৯ হাজার ৭৭৩ টাকা এবং সড়ক কর ১১ হাজার ৫০০ টাকা মিলিয়ে ২১ হাজার ২৭৩ টাকা জমা দিতে হতো। বর্তমানে পুনর্নির্ধারণ করা হিসাব অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য (এককালীন) ৯ হাজার ৭৭৩ টাকা এবং সড়ক কর (প্রথম কিস্তি) ২ হাজার ৩০০ টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ১২ হাজার ৭৩ টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর পরবর্তী ৮ বছরে কিস্তিপ্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকা করে চারটি সমান কিস্তিতে জমা দিতে হবে।

মালিকদের অভিযোগ, তারা স্থানীয়ভাবে যথাযথ ব্যাংক শাখার অভাবে সময়মতো টাকা জমা দিতে না পারায় পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।

তারা জানান, গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ইউসিবিএল শাখা হঠাৎ করে বিআরটিএর টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। এরপর পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর জেলাতে টাকা জমা দেওয়া শুরু হলেও তা মঙ্গলবার থেকে টাকা জমা নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে টাকা জমা দিতে থাকে মালিকরা। গত ২৮ মে থেকে কুষ্টিয়ার ব্র্যাক ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

জানা গেছে, নেপাল রাষ্ট্রীয় ব্যাংক (এনআরবি) এর একটি শাখা চুয়াডাঙ্গায় চালু হতে যাচ্ছে। বিআরটিএর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের পরিদর্শক এসএম সবুজ জানান, গত ২৯ মে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এই ব্যাংকের প্রতিনিধিরা দেখা করেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দোতলায় ব্যাংকের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসককে তারা জানিয়েছেন, ১০ দিনের মধ্যে শাখাটি তারা চালু করতে চেষ্টা করবে।

সবুজ জানান, মোটরসাইকেলের টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর একটি স্লিপ দেওয়া হবে। ওই স্লিপ দেখালে পুলিশ মোটরসাইকেল ছেড়ে দেবে। এ ছাড়া টাকা জমা দেওয়ার এক মাস পর রেজিস্ট্রেশনের কাগজ মালিক হাতে পাবে বলেও জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘সদর থানা এলাকায় কতটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে, তা সঠিক বলতে পারব না।’ তবে তিনি দাবি করেছেন প্রতিদিন জব্দকৃত মোটরসাইকেলের তালিকা ডিআইও (১) ডিএসবি অফিসে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে ডিএসবি কার্যালয়ের ডিআইও (১) পরিদর্শক নাজমুল হুদা জানান, জেলায় জব্দকৃত মোটরসাইকেলের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

চুয়াডাঙ্গা সদর ট্রাফিকের পরিদর্শক (টিআই) মাহবুবুল আলম শরীফ বলেন, ‘জেলার চার থানা ও বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িতে মোটরসাইকেল জব্দ করা হলেও এর প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানি না। ওপরের নির্দেশে এ অভিযান চলছে।’

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার চার থানা পুলিশ, ৩৫ পুলিশ ক্যাম্প ও ট্রাফিক বিভাগ একযোগে মোটরসাইকেলের মালিকদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালায়। এ সময় জেলার বিভিন্ন সড়ক থেকে নম্বরবিহীন শত শত মোটরসাইকেল জব্দ করে চার থানা চত্বর, ৩৫ পুলিশ ক্যাম্প ও জেলা পুলিশ লাইনে খোলা আকাশের নিচে জমা করে রাখা হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে এভাবে ফেলে রাখায় মোটরসাইকেলগুলো নষ্ট হতে চলেছে।



মন্তব্য চালু নেই