জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে পারবে কী বিএনপি?

‘লন্ডন লাইফ’ নিয়ে বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পুলিৎজার নমিনি সাংবাদিক ভেরোনিক মিশ্চিয়ান ও ক্যারোলিন ইরবি-কে একটি ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে ক্যারোলিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জানতে চাইলেন। প্রশ্ন করলেন, বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা কি? বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা চুরির কথা বলতেই হাসলেন। বললেন, তোমরা অনেক ধনী। এর আগেও শুনেছি, তোমাদের ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। তোমরা মূলত: সামাজিক বিশৃঙ্খলায় ভুগছো। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাই এর পেছনে দায়ী। সবকিছুতে ডিসিপ্লিন ফেরাতে তোমাদের উদ্যোগ কি?

সত্য বলতে কি – এসব প্রশ্নের আমি আর কোনো উত্তর দিতে পারিনি। শুধু বলেছি, সময় লাগবে।

ক্যানারিওয়ার্ফ থেকে থেমস নদীর তীর দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। বারবার মাথায় আঘাত করছিল ক্যারোলিনের এক নি:শ্বাসে করা প্রশ্নগুলো। আমার মাতৃভুমিকে নিয়ে বৃটিশ সাংবাদিকের তাচ্ছিল্যের হাসি মনে পড়ে কান্না পাচ্ছিল। অবশ্য সাক্ষাতের শেষাংশে ‘নিজের দেশকে সংকটমুক্ত করতে কিছু ক্রিয়াটিভ কাজ করো’ ক্যারোলিনার হাস্যোজ্জল মুখের এই পরামর্শ মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দুই ঘন্টা ধরে ভাবলাম, ক্রিয়াটিভ কি কাজ করতে পারি। অনেক ভাবনা মাথায় আসে, তবে সঙ্গে নানা সীমাবদ্ধতাও উঁকি দেয়।

এরই মধ্যে প্রিয় মাতৃভুমির সবচেয়ে বড় সংকট কি, সেটা নিয়ে একা একা পর্যালোচনা করছিলাম। আজ যদি সরকারের কোনো মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর কাছে জানতে চাই, দেশের সবচেয়ে বড় সংকট কি? উত্তরে বলবেন, জঙ্গীবাদ। বিএনপির ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র। ইত্যাদি, ইত্যাদি।

বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে প্রশ্ন করলে উত্তর আসবে, গণতন্ত্রহীনতা। দুর্নীতি-লুটপাট-বিচারহীনতা। গুম, হত্যা, অবৈধ সরকারের নিপীড়ন ইত্যাদি।

জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা উত্তর দেবে, তাদের নেতাদের ফাঁসি। গণতন্ত্রহীনতা। পুলিশের নির্বিচারে গুলি, গুম, হত্যা ইত্যাদি।

এভাবে সরকারের ভেতরে থাকা বাম দলগুলো বলবে, জঙ্গীবাদ, বিরোধী দলগুলোর পাকিস্তান-প্রীতি ইত্যাদি। সরকারের বাইরে থাকা বাম দলগুলো বলবে- দুর্নীতি, পুঁজিবাদ, সরকারের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ইত্যাদি।

অন্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের বক্তব্য হবে, সরকারের ইসলাম বিরোধিতা, ভারত-প্রীতি ইত্যাদি।

একজন অরাজনৈতিক নাগরিকের কাছে আপনি যদি জানতে চান, বাংলাদেশের বর্তমানে প্রধান সংকট কি? তিনিও নিজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী উত্তর দেবেন। যদি ব্যবসায়ী হন, বলবেন- বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা। ব্যাংক লোনের অব্যবস্থাপনা, অনৈতিক লেন-দেন, ইত্যাদি।

সরকারি চাকুরিজীবী বলবেন, অস্থির পরিবেশ। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়ার সাথে পেরে উঠছি না। সন্তানকে ভাল কোনো স্কুলে ভর্তি করতে পারছি না।

রিকশাওয়ালা বলবেন, চালের দামের সাথে ঘামের দামের সামঞ্জস্য করতে পারছি না।

শিক্ষক বলবেন, রাজনৈতিক ছাত্রদের হাতে অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সময় কাটাই। বেতন দিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।

একজন সাংবাদিক বলবেন, মন খুলে সত্য প্রকাশ করতে পারছি না। অনিয়মিত হয়ে পড়ছে বেতন। জীবনের চাকা থমকে যাচ্ছে।

ছাত্রলীগের সাবেক কোনো নেতা বলবেন, আমরা তো কিছুই করতে পারলাম না। পুলিশ ও সরকারি আমলারাই টাকা বানাচ্ছে। সাত বছরে কোনোভাবে সোজা হয়ে দাড়িয়েছি। জানি না, কি হবে।

ছাত্রদলের সাবেক কোনো নেতার উত্তর হবে, এতো বছর রাজনীতি করে কি পেলাম? চাকুরি নিলাম না। দশ বছর ক্ষমতার বাইরে। জীবনের হিসাব মেলাতে পারছি না।

ইংলিশ মিডিয়াম থেকে সার্টিফিকেটধারী কোনো তরুনের জবাব হবে, ডোন্ট নো। হোয়াট ক্যান আই ডু ইন বাংলাদেশ? নো জব। ফিলিং রিস্ক ফর হাইয়ার এডুকেশন।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পদত্যাগী গভর্ণর ড. আতিউর রহমান বলেই দিয়েছেন, বীরের মতো পদত্যাগ করেছি। সংকট ইতোমধ্যে কেটে গেছে।

সত্যিকার অর্থেই প্রতিটি মানুষ নিজের ‘প্রাথমিক স্বার্থ’কে প্রাধান্য দিয়েই সবকিছু বিবেচনা করেন। এই প্রাথমিক স্বার্থের সমন্বয়েই তৈরী হয় গোষ্ঠী স্বার্থ; যা আরো বড় আকার হিসেবে পরিচিত হয় জাতীয় স্বার্থ হিসেবে।

প্রিয় পাঠক, আমাদের দুর্ভাগ্য – এই আধুনিক যুগেও আমরা আমাদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ‘জাতীয় স্বার্থ’ নির্ধারণ করতে পারছি না। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থ কেন্দ্রিক ধুঁকে ধুঁকে সময় পার করছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র। নিরাপত্তা হুমকিতে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি। রাষ্ট্র বিনির্মাণ নয়, ব্যক্তি স্বার্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আমরা দূর্বল করে ফেলছি। জাতীয় নিরাপত্তা নেই। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশৃঙ্খলায় দিগি¦দিক জাতি।

স্বাধীনতার চার যুগেও এই দেশে একজন যুবক তার ভবিষ্যত স্বপ্ন নির্ধারণ করতে পারে না। কোনো কিছুতেই নৈতিক কোনো প্রতিযোগিতা নেই। পরিবার থেকে অনৈতিক অর্থ উপার্জনের শিক্ষা পেতে হয় কিশোরদের। এই বিশৃঙ্খলা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। রাষ্ট্রের নৈতিক ও যৌক্তিক ভিত্তি ভেঙ্গে পড়েছে। বৃটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের তত্ত্ব অনুযায়ী ‘রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী নির্বিশেষে নাগরিকদের মাঝে কনভেনশনাল নৈতিকতা হারিয়ে’ একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

এবার আসি বিলেতি সাংবাদিক ক্যারোলিন ইরবি’র আহ্বান অনুযায়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্র রক্ষায় আমরা কি করতে পারি। এক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে। আদর্শ রাষ্ট্র কিংবা কল্যাণ রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন আমরা এখন দেখতে পারছি না। তবে একটি স্বাধীন, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র আমার হৃদয়ের চাওয়া। আমার মায়ের আকুতি – আমি, আমার ভাই, বন্ধু নির্বিশেষে ১৬ কোটি বাংলাদেশীর জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্রের। যে-ই রাষ্ট্রে গুমের ভয় নিয়ে রাতে ঘুমাতে হবে না। নাগরিককে গুলি করে হত্যার জন্য পুলিশ রাজপথে নামবে না। বিডিআর হত্যার আদলে নতুন কোনো বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটবে না। নিরাপত্তা বাহিনী দেখলে মানুষ পালাবে না। গরীব অটোরিকশাওয়ালা আগ্নিদগ্ধ হবেন না। হরতাল-অবরোধে অর্থনীতি ধ্বংসের প্রতিযোগিতা হবে না। ব্যাংকের টাকার লেনদেন হবে, তবে অনৈতিক লুটপাট হবে না। যে যার ভোট দেবে, ভোট ডাকাতি হবে না।

আমার বিবেচনায় অনেক ভিন্নমতের মধেও বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংকট কাটাতে নিন্মোক্ত পাঁচটি বিশেষ দিকে নজর দেয়া অতীব জরুরী-

প্রথমত: ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থে রূপ দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত: জাতীয় স্বার্থ চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা রক্ষা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

তৃতীয়ত: নাগরিকদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও ন্যায়বোধ জাগ্রত করাতে হবে।

চতুর্থত: রাষ্ট্র, দল, প্রতিষ্ঠান ও পরিবারে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করতে হবে।

পঞ্চমত: রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সৃষ্টি করতে হবে; যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের কাছে অনুসরনীয় হবে।

এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসবে, এসব প্লেটোনিক ধারণা বাস্তবায়ন করবে কে? সত্যিকার অর্থেই – এই প্রশ্নের উত্তরেই আমরা আটকে যাচ্ছি। কোনো একক ব্যক্তি নিশ্চয়ই সেটি পারবে না। এজন্য দরকার হবে কোনো গোষ্ঠী বা দলের; যেখানে নেতৃত্ব দেবেন একজন সাহসী ন্যায়বান নেতা। যিনি হবেন সত্যিকার অর্থেই নায়ক। তার মানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র একজন নায়কের অপেক্ষায়। কোথায় পাবো আমরা এমন একটি গোষ্ঠী বা দল। কোথায় পাবো আমরা একজন নায়ক।

এক্ষেত্রে সর্বশেষ এক-এগারোর ‘সেনাবাহিনী সরকারের’ অভিজ্ঞতা আমাদের ভাল নয়। ওই সরকারটিই বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধ্বংসের বীজ বপন করে গেছে। তাহলে……….. রাজনৈতিক গোষ্ঠীই আমাদের একমাত্র ভরসা। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থাও অনেক শোচনীয়। রাজনৈতিক দলে এখন রাজনীতি নেই, আছে যে কোনো মূল্যে ‘ক্ষমতার নীতি’ ও ‘দুর্নীতি’। লুটের নীতি, খুনের নীতি, ধ্বংসের নীতি, পরনির্ভরশীলতার নীতি।

ধরুন, সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তারা এখন অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে ফেরার দৃশ্যত কোনো চিন্তা তাদের নেই। গৃহপালিত বিরোধী দলের ভুমিকায় থাকা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আর ভালো কিছু ভাবার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বাম দলের মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি এখন ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করতেই মগ্ন।

ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাম দলগুলোর আওয়াজ সাধারণ মানুষের কাছে সত্যিকার অর্থেই পৌঁছছে না। একাত্তর ইস্যুতে আটকে গেছে জামায়াত ইসলামী। সেখান থেকে বের হবার কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। অন্য ইসলামী দলগুলো সেভাবে সংগঠিত নয়। ছোট ছোট আরো যে ডজন দেড়েক দল আছে, তৃনমূলে তাদের নিজস্ব কোনো কাঠামোই গড়ে উঠেনি।

এরপর বাকী রইল বিএনপি। পুরো নাম- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা দলটি দীর্ঘ ১০ বছরের নিপিড়ণে জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, বর্তমান গণতন্ত্রহীনতা ও বিশৃঙ্খলা কাটাতে একমাত্র ভরসা হতে পারে বিএনপি। তবে সেখানেও নাগরিকদের প্রশ্ন আছে- বিএনপি কী সেই দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত? ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দল ও রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপির পরিকল্পনা কি? রাষ্ট্রের নৈতিক ও যৌক্তিক ভিত্তি গড়ে তুলতে এই দলের কি কোনো মাস্টার প্লান আছে? ১৯ মার্চের ষষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপি নেতৃত্ব নাগরিকদের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারে কি-না এটাও এখন দেখার বিষয়।

গতানুগতিক বক্তৃতা, সমালোচনা আর গীত-সঙ্গীতে রাষ্ট্র রক্ষা হবে না। শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি ভুখন্ডের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নাগরিকরা চায়, আইন মেনে চলার মতো পরিবেশ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রূপরেখা জানাতে হবে তাদের। আমরা এটা দেবো, সেটা দেবো। এটা করবো না, ওটা করবো। এসব ভাষণের দিন শেষ। এখন মানুষ জানতে চায়, আপনি কি করবেন, কিভাবে করবেন। আপনার জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবকাঠামো আছে কি-না। ভাষণে ব্যাংক চুরির ইতিহাস শোনাবেন, কিন্তু চুরি ও দুর্নীতি ঠেকানোর ভবিষ্যত কৌশল প্রকাশ করবেন না। সেই ভাষণ বিবেচিত হবে আষাঢ়ে গল্প হিসেবে। পুরোনো ইতিহাসকে গুছিয়ে ছোট করে বলুন, নতুন পরিকল্পনা ও স্বপ্নকে পেশ করুন বড় পরিসরে। এতে দলীয় কর্মীরাও উৎসাহিত হবেন, প্রভাবিত হবেন সাধারণ নাগরিক। আসন্ন কাউন্সিলে বিএনপি নেতৃত্বকে ভবিষ্যত রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুচিন্তিত পরিকল্পনা পেশ করতে হবে – এটা সময়ের দাবি।

বিএনপিকে যেভাবে দল হিসেবে গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী হতে হবে, তেমনি দল নেতাকে হয়ে উঠতে হবে ‘দলনায়ক’। সেটা শুধু দলের ভেতরে নয়; নাগরিকদের কাছেও স্বীকৃত হতে হবে। যদিও ‘দলনেতা‘ ধারণা নিয়ে বিএনপির বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। সেটা শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃনমূল সর্বত্রই দৃশ্যমান। চেইন অব কমান্ডে যেমন ঘাটতি আছে, তেমনি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার নামে পারস্পরিক আস্থার অভাব দলটিকে দূর্বল করছে। এরপর নানা অপপ্রচার ও চক্রান্তে দলটি এখন পর্যুদস্ত।

ধরুন, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে। গণমাধ্যধ্যমের তথ্যমতে, দলের ভেতরে কিছু দুস্কৃতিকারী গুঞ্জন ছড়িয়েছে – সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে নতুন কমিটির রূপরেখা চুড়ান্ত করছেন। তালিকা প্রায় চুড়ান্ত। কি হাস্যকর প্রচারণা! চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বে সব নেতারা কাজ করছেন বাংলাদেশে। আর কমিটি হবে লন্ডনে!

একটি রাজনৈতিক দলের উপরিভাগে দ্বৈত নেতৃত্বের প্রচারণা চালিয়ে কিছু অস্বচ্ছ ও অশিক্ষিত চামচা যখন সুবিধা লুটতে সক্ষম হন, তখন দলীয় কাটামো দূর্বল হয়ে পড়ে। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যারা দলের পিলার হিসেবে কাজ করেন, সেইসব সিনিয়র নেতারাও অসহায় বোধ করেন। তখন দলে সংকট বাড়তে থাকে। এই অবস্থা কাটিয়ে ‘দলনেতা’র ধারণা বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করা খুবই জরুরী। চেয়ারপার্সন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সবকিছু চুড়ান্ত করবেন, এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলেও শৃঙ্খলা বিদ্যমান থাকে। চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠিত হবে পার্টিতে। অন্যথায় পার্টি ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকবে।

আসন্ন কাউন্সিলে দলীয় কাঠামো ও দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিএনপি জনগণের ভরসার দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করুক। জাতিকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অথনৈতিক বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানোর স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হোক, সেই প্রত্যাশা রাখি।

লেখক: যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত সাংবাদিক ও গবেষক।



মন্তব্য চালু নেই