জাতীয় পার্টির সম্মেলন শনিবার

জাতীয় পার্টির অষ্টম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শনিবার। ইতোমধ্যে সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও জাপার এবারের সম্মেলন কিছুটা ব্যতিক্রম।

সম্মেলনের দিন-ক্ষণ ঠিক হওয়ার আগেই দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব পদে নিয়োগ দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফলে এ সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না।

তবে এবারের সম্মেলনকে দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা দেখছেন শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে। তাই এবারের সম্মেলনকে দলটির ইতিহাসে জাঁকজমকপূর্ণ, বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল করার চেষ্টা চলছে।

জাপা নেতারা জানিয়েছেন, অষ্টম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে চায় দলটি। এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে বলে বিশ্বাস তাদের। পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও মতবিরোধের অবসান ঘটিয়ে এ সম্মেলন সফল করতে নেতাকর্মীরা একযোগে কাজ করছেন।

সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায়ে এক লাখের মতো নেতাকর্মী যোগ দেবেন। এ জন্য ব্যপক প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। সম্মেলনের আগে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব রহুল আমিন হাওলাদার হেলিকপ্টারযোগে গিয়ে বিভাগে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও রওশন এরশাদের মধ্য দ্বন্দ্ব নিরসন হওয়ায় জাপার এমপিরা সর্বশক্তি দিয়ে সম্মেলন সফল করতে মাঠে নেমেছেন। দলটির এমপিরা নিজ নিজ এলাকা থেকে ব্যাপক শোডাউন করে সম্মেলনে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সম্মেলন সফল করার জন্য কাজ করছেন।

রাজধানীর রমনার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তন ও পাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সকাল ১০টায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

প্রথম পর্বে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সাধারণ সম্মেলন, দুপুর ২টা থেকে মিলনায়তনে কাউন্সিলরদের নিয়ে মূল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় পার্টির ৭৬টি সাংগঠনিক জেলা থেকে ১৯ হাজার ৭শ’ কাউন্সিলর ঘরোয়া অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন। ডেলিগেট থাকবেন আরও প্রায় ৫০ হাজার। সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে নেতা নির্বাচনসহ রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং গঠনতন্ত্রেও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়ামের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পার্টির গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। গঠনতন্ত্রে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান পদ ছিল না। কিন্তু নতুন করে এই পদ সৃষ্টির প্রস্তাব প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সম্মেলনে এসব প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বহল থাকছে। এ ধারায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতায় এই ধারামতে, ‘চেয়ারম্যান প্রয়োজনবোধে প্রতিটি স্তরের কমিটি গঠন, পুর্নগঠন, বাতিল ও বিলোপ করিতে পারবেন। চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যেকোনো পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যেকোনো পদ থেকে যেকোনো ব্যক্তিকে অপসারণ ও যেকোনো ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে পারবেন। তিনি এই ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, তাকে প্রদত্ত উপরোক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের সময় তিনি প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে আলোচনা করবেন’।

এ ছাড়া গঠনতন্ত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না করলেও ভাষাগত কিছু পরিবর্তন-সংশোধন করার অনুমোদন হয়েছে।

কাউন্সিলে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাদেরকে আমন্ত্রণ কার্ড পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা বলেছেন, ‘এটি শুধু আমাদের পার্টির সম্মেলন নয়, এই দিন আমাদের শক্তি প্রদর্শনের দিন। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করব জাতীয় পার্টিই আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান শক্তি।’

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুস সবুর আসুদ বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির সফল কাউন্সিল দেখে দেশবাসী বুঝতে পারবে, এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমির হাওলাদার বলেছেন, ‘সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ৯০ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি যে একটি ফ্যাক্টর, তা আমরা প্রমাণ করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এই সম্মেলন হবে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ। অতীতের সম্মেলনগুলোর চেয়ে এটি সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল হবে।’



মন্তব্য চালু নেই