জানেন কি! আপনার স্কিন ক্যান্সারের জন্য দায়ী ‘অরেন্জ জুস’

গবেষকরা মনে করেন সাইট্রাসে যেসব যৌগ আছে সেগুলির ফলে ত্বক সূর্যের আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

যারা প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কমলার রস বা জাম্বুরা অথবা মোসাম্বি জাতীয় ফল খান তাদের মেলানোমা হওয়ার ঝুঁকি সামান্য বেশি। স্কিন ক্যান্সারের স্বল্প পরিচিত একটি ধরনের নাম মেলানোমা—এটি সবচেয়ে মারাত্মক।

যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে প্রায় পঁচিশ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে এই ফল পাওয়া গেছে। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যারা নিয়মিত কমলার জুস অথবা জাম্বুরা জাতীয় ফল খায় তাদের মেলানোমা হওয়ার ঝুঁকি যারা এসব ফল এড়িয়ে চলেন তাদের চেয়ে বেশি।

তবে যেসব খাবারে বা ফলে সাইট্রাস আছে সেগুলি স্কিন ক্যান্সার ঘটায় এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। প্রভিডেন্সের রোহড আইল্যান্ড হাসপাতালের ডার্মাটোলজিস্ট এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ডার্মাটোলজি বিভাগের প্রধান ড. আবরার কুরেশি বলেছেন সাইট্রাসে থাকা কিছু নির্দিষ্ট যৌগের কারণে এটা হওয়া সম্ভব।

ড. কুরেশি বলেন, সাইট্রাসে সোরালেনস এবং ফুরোকোমারিনস নামের আলোকসংবেদী বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলি যদি ত্বকের উপরে থাকে তাহলে ত্বককে সূর্যের আলোর প্রতি আরো বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। যেমন, বাচ্চাদের চিবুকে যে জায়গাটিতে সাইট্রাস লাগে সে জায়গাটিতে দেখবেন রোদে পোড়ার দাগ হয়ে যায়। যদি কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে সাইট্রাস সমৃদ্ধ খাবার মেলানোমার আশঙ্কা বাড়ায়ও, তবু সেই কারণে কমলার রস বাদ দেওয়া উচিৎ নয়।

তিনি বলেন, খুব কড়া রোদ না হলে সাইট্রাসে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। ছায়ায় থেকে, সানব্লক ব্যবহার করে, হ্যাট পরে কড়া রোদ এড়িয়ে চলুন।

একই কথা বলেছেন স্কিন ক্যান্সারের রিসার্চার ম্যারিয়েন বেরউইক। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এই গবেষণা দেখে সাধারণ মানুষদের কোনো পরিবর্তন আনা উচিৎ। আপনার খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফল এবং শাকসব্জি থাকা উচিৎ।

এই গবেষণাটিতে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের দীর্ঘ দিনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন। কয়েক বছর পর পর নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণকারীরা তাদের স্বাস্থ্য এবং লাইফস্টাইল বিষয়ে বিস্তারিত গবেষকদের জানিয়েছেন।

দেখা গেছে দীর্ঘ ২৫ বছরে ১৮০০ জন মেলানোমায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা নিয়মিত কমলার জুস বা জাম্বুরা বা মোসাম্বি জাতীয় ফল খান তাদের মেলানোমার ঝুঁকি বেশি ছিল। এই সিদ্ধান্তে আসার ক্ষেত্রে অন্য বিষয়গুলি যেমন কে কত সময় সূর্যের আলোতে ছিল, কার রোদে পোড়ার পরিমাণ কত এগুলিও ধরা হয়েছে। তারপরও এই ফল দেখা গেছে।

দেখা গেছে যারা সপ্তাহে একবার কমলার জুস খান তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন খান তাদের মেলানোমার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেশি। আর যারা সপ্তাহে অন্তত তিনবার জাম্বুরা জাতীয় ফল খান তাদের মেলানোমার ঝুঁকি যারা একবারও খান না তাদের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি।

তবে এছাড়া কমলা বা জাম্বুরার সাথে মেলানোমার ঝুঁকির আর কোনো যোগাযোগ খুঁজে পান নি গবেষকরা। দেখা গেছে যারা সপ্তাহে একবার কমলার জুস খান তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন খান তাদের মেলানোমার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেশি।

বেরউইক বলেছেন, এর কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। গবেষণায় অন্য লোকদের ক্ষেত্রেও যদি একই ফলাফল পাওয়া যায় তাহলে হয়ত বোঝা যাবে সাইট্রাসের সাথে মেলানোমার আসলেই যোগাযোগ রয়েছে।

আমেরিকান সোসাইটি অব লিনিক্যাল অনকোলজির মুখপাত্র ড. গ্যারি স্কাওয়ার্জ বলেছেন, গবেষণার ফলাফল যেহেতু এখনো স্পষ্ট না, ফলে কমলা বা জাম্বুরা অথবা এ জাতীয় ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরামর্শ দেওয়াটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

একেবারে নিশ্চিত ফলাফল না আসা পর্যন্ত আমাদের প্রয়োজন হবে সাইট্রাস খাবার খাওয়ায় কোনো পরিবর্তন না এনে রোদ থেকে আমাদের ত্বক রক্ষা করা।

কুরেশি বলেন, ফলের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের আলোকসংবেদী যৌগ থাকে। সুতরাং মেলানোমা ঝুঁকির ক্ষেত্রে সব সাইট্রাস ফল এক রকম না।

তাছাড়া পাস্তুরাইজ করা জুসে তাপ দেওয়ার কারণে আলোকসংবেদী যৌগগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ে, এ কারণে হয়ত জাম্বুরা বা মোসাম্বির জুসের সাথে মেলানোমার কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায় নি।

কিন্তু কমলার জুস যেহেতু সাধারণত ঘরেই তৈরি করা হয় তাই এর সাথে মেলানোমা-ঝুঁকির যোগাযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এই গবেষণার ফলাফল আরো গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। কুরেশি বলেন, আমরা অবশ্যই চাই না স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এমন ফল লোকজন এড়িয়ে চলুক।

শুধু একটু সচেতন থাকুন যে সাইট্রাস ফলের সাথে মেলানোমার যোগাযোগ আছে। যখন সাইট্রাস ফল খাবেন তখন রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলুন।



মন্তব্য চালু নেই