জানেন ডাক্তারদের লেখা প্রেসক্রিপশন পড়া যায় না কেন?

বাংলাদেশের উচ্চ আদালত আজ এক নির্দেশনায় চিকিৎসকদেরকে স্পষ্টাক্ষরে পাঠোপযোগী ব্যবস্থাপত্র লিখতে বলেছে। সেই সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আদালত নির্দেশ দিয়েছে ত্রিশ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করতে।

আইনজীবী মনজিল মোরশেদের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আজ এ নির্দেশ দেয়।

মোরশেদ বিবিসিকে বলেন, “ডাক্তারদের লেখা প্রেসক্রিপশন যে অস্পষ্ট থাকে এটা সবারই জানা। কখনো কখনো ফার্মেসি-ওয়ালারা পর্যন্ত ঠিকঠাক এসব প্রেসক্রিপশন পড়তে পারে না। তখন তারা ভুল ঔষধ দিয়ে দেয়, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রোগী”।

এ কারণে এই আবেদন করা উল্লেখ করে মি. মোরশেদ বলেন, তিনি আবেদনে লিখেছেন ডাক্তাররা যেন ক্যাপিটাল বা বড় হাতের হরফে ব্যবস্থাপত্র লেখেন অথবা কম্পিউটারে কম্পোজ করে ব্যবস্থাপত্র দেন।

বাংলাদেশে ডাক্তারদের এই ব্যবস্থাপত্র লেখা নিয়ে নানারকম মিথ প্রচলিত রয়েছে।

প্রচলিত রয়েছে নানারকম কৌতুকও। কিন্তু সব ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হবে কেন?

“যারা জনপ্রিয় চিকিৎসক, দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ রোগীরা তাদের কাছেই ভিড় জমাচ্ছে। ফলে সিনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাদেরকে অতিরিক্ত সংখ্যক রোগী দেখতে হচ্ছে, অতিরিক্ত সংখ্যক ব্যবস্থাপত্র লিখতে হচ্ছে, ফলে দ্রুত লিখতে গিয়ে হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে”।

তরুণ চিকিৎসক নাফিস হোসেন বলছেন, ব্যবস্থাপত্রের পাঠযোগ্যতা নিয়ে রোগীরা যে অভিযোগ করেন তা অমূলক না।

তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

তিনি বলছেন, “সার্জনদের হাতের লেখা খারাপ হয়, কারণ তারা যে ধরণের কাঁটা-ছেড়ার মধ্যে থাকেন, যে ধরণের জটিল সব অস্ত্রোপচার করেন, সেরকম কয়েকটি অস্ত্রোপচার করবার পর পর চেম্বারে ফিরে যখন ব্যবস্থাপত্র লিখতে বসেন তখন ভাল হাতের লেখার জন্য পেশীতে যে ফাইন টিউন থাকা দরকার তা আর থাকে না”।

“এছাড়া যারা জনপ্রিয় চিকিৎসক, দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ রোগীরা তাদের কাছেই ভিড় জমাচ্ছে। ফলে সিনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাদেরকে অতিরিক্ত সংখ্যক রোগী দেখতে হচ্ছে, অতিরিক্ত সংখ্যক ব্যবস্থাপত্র লিখতে হচ্ছে, ফলে দ্রুত লিখতে গিয়ে হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে”, বলছেন ড. হোসেন।

তিনি আরো বলেন, “আমরা যখন মেডিকেলের ক্লাস করতাম, তখন আমাদের প্রচুর নোট নিতে হতো। রোগীদের ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে স্যারেরা দ্রুত বলে যেতেন, আর আমাদেরকে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণ বিষয় নোটবুকে লিপিবদ্ধ করতে হত। এর কারণে হাতের লেখা খারাপ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে”।

তবে সব ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ সেটা বলা যাবে না উল্লেখ করে মি. হোসেন বলেন, “আমি অনেক ডাক্তারকেই দেখেছি, খুব সুন্দর তাদের লেখা, খুব সুন্দর করে তারা প্রেসক্রিপশন লেখেন”।

আজকাল অবশ্য অনেক নামজাদা হাসপাতালই কম্পিউটারে ব্যবস্থাপত্র লেখার প্রচলন করেছে।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, যিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালেও রোগী দেখেন, তিনি বলছেন, এই হাসপাতালটিতে এরই মধ্যে কম্পিউটারের মাধ্যমে লেখা প্রেসক্রিপশনের প্রচলন করেছে। -বিবিসি।



মন্তব্য চালু নেই