জানেন, বয়স বাড়লে কেন সময় দ্রুত বয়ে যায়?

যখন শিশু ছিলাম, তখন গ্রীষ্মের ছুটি যেন শেষই হতো না। ঈদ বা পূজার অপেক্ষায় ছিল স্বর্গীয় সুখ। বড়রা বসে বসে এমনটাই ভাবেন। বড় হয়ে গেছে শিশুদের মতো সেই অনুভূতি কেন মেলে না? মনে হয়, সময় জিনিসটাই হারিয়ে যায় বড়দের জীবন থেকে। ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো যেন ঘোলাটে হয়ে আসে।

আসলে বড় হওয়ার পর নানা দায়িত্বশীলতা আর ব্যস্ততার কারণে সময় দ্রুত বয়ে যায় না। গবেষণায় বলা হয়, সচেতন সময়গুলো বড়দের কাছে খুব দ্রুত বয়ে যায় বলে মনে হয়। এ কারণেই বেশি ব্যস্ততার অনুভূতি বিরাজ করে মনে।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সচেতন মুহূর্তগুলো কেন এত দ্রুত বয়ে যায় বলে মনে হয়, এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে। একটি ধারণা বলে, বয়সের সঙ্গে ক্রমশ মানুষের অভ্যন্তরের দেহঘড়িটি পরিবর্তিত হতে থাকে। বিপাকক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে। হৃদস্পন্দন ও শ্বাসের গতি কমে আসতে থাকে। কিন্তু শিশুদের এই বায়োলজিক্যাল ঘড়ি বেশ দ্রুত টিক টিক করে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মনে হয়, সময় অনেক বয়ে গেছে।

আরেক তত্ত্ব বলছে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের অংশে আমরা কতটা তথ্য সচেতনভাবে গ্রহণ করছি তা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি বেশি তথ্য নিয়ে আমাদের মস্তিষ্ক বেশ সিশয় ধরে কাজ করে। তখন মন হয়, সময় অনেক কেটে গেছে। এই অংশটি ধীরগতির বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলে। অনেক সময় ঘটনা ঘটার আগ মুহূর্তে ঘটনার বিষয়ে তথ্য মাথায় কাজ করতে থাকে। এখানে অচেনা কোনো পরিস্থিতির অর্থ আরো বেশি তথ্য আসতে চলেছে।

নতুন পরিস্থিতিতে আমাদের মস্তিষ্ক আরো বিস্তারিত স্মৃতি ধারণ করে নেয়। একটি ঘটনা যতটা সময় ধরে ঘটে, পরে স্মৃতি রোমন্থন করলে সেই ঘটনা ততটা দ্রুত ঘটেছিল বলে মনে হয় না। মনে হয়, আরো ধীরে ধীরে ঘটেছিল।

আসলে মানুষ বড় হওয়ার সঙ্গে তার চারপাশের সঙ্গে অনেক বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। তখন মানুষ তার বাড়ি বা অফিসের পরিস্থিতি আর বিস্তারিতভাবে খেয়াল করে না। কিন্তু শিশুদের কাছে তার চারপাশটা অনেকটা অপরিচিত।

তারা নতুন নতুন পরিবেশে অচেনা নানা ঘটনা দেখতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা পরিচিত গণ্ডির বাইরের পরিবেশকে বুঝতে অনেক বেশি মস্তিষ্ক খাটিয়ে থাকে। তত্ত্ব বলে, এই ঘটনা শিশুদের কাছে অনেক ধীরগতির হয়ে ওঠে। তারা ধীরে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু বড়দের মস্তিষ্কে রুটিনমাফিক পরিবেশে এ ঘটনা অনেক দ্রুত ঘটে যায়।

দিন যত গড়ায় শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশকে তত বেশি চিনতে থাকে। ফলে তার চিন্তার সময় বেশ দ্রুততর হতে থাকে। এর পেছনের জৈবিক কর্মপ্রক্রিয়া বোঝাতে বলা হয়, মস্তিষ্কের কার্যক্রমের ওপর নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামাইনের প্রভাব সময় মাপতে শেখায়। বিশ বছর বয়স থেকে বয়স যত বাড়তে থাকে ডোপামাইনের পরিমাণ তত কমতে থাকে। ফলে সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে বলে মনে হয়।

কিন্তু এসব কোনো তত্ত্বই সময় চলে যাওয়ার গাণিতিক হিসাবটি বের করতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে একই সময় অনেক কমে আসার বিষয়টি ‘লগারিদমিক স্কেল’র সঙ্গে জড়িত। ভূকম্পন বা শব্দ তরঙ্গ মাপাতে লগারিদমিক স্কেলের ব্যবহার গতানুগতিক পদ্ধতি।

আমরা যে সময়টা কাটিয়েছি সে সময়ের কতটুকু উপলব্ধি করেছি তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুই বছর বয়সী একটা শিশুর জীবনের অর্ধেকটা সময়ই মাত্র ১ বছর। ফলে কম বয়সীদের কাছে দুটো জন্মদিনের মধ্যবর্তী সময়টি অনেক বেশি বলে মনে হয়।

লগারিদমিক স্কেলে মানুষ এক পরিমাণ সময়কে একেকভাবে অনুভব করি। প্রতি ১০ বছর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই অনুভূতি বদলে যেতে থাকে। এই স্কেল অনুযায়ী, ৫-১০ বছর বয়সীরা মাঝের ৫ বছর সময় যেভাবে অনুভব করবে, একই অনুভূমি পেতে পারেন ৪০-৮০ বছর বয়সীরা।-ইনডিপেনডেন্ট ও কালের কন্ঠ



মন্তব্য চালু নেই