জাপান পারলে পাকিস্তান পারবে না কেন?

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে একটি বিরল চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি সৈন্যদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে জাপান। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা একটা স্পর্শকাতর বিষয়ের কার্যত সমাধান করল দুই দেশ।

১৯১০ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের শাসনাধীন ছিল। এর মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা ‘কমফোর্ট উইমেন’ হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ কোরিয়ার দুই লাখেরও বেশি নারীকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে জাপান। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ধরে এনে তাদেরকে জোর করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করত জাপানি সেনারা। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে এ বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘদিন ধরেই কোরিয়া বিভিন্ন ফোরামে ও নানাভাবে এ ইস্যুতে জাপানকে চাপ দিয়ে আসছে। কোরিয়ার অব্যাহত চাপে অবশেষে এ চুক্তিতে সই করে জাপান। চুক্তি অনুযায়ী জাপান দক্ষিণ কোরিয়াকে এক বিলিয়ন ইয়েন (৮.৩ মিলিয়ন ডলার বা ৬৫ কোটি টাকা) দিতে রাজি হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলবে, যা বেঁচে থাকা ‘কমফোর্ট উইমেন’দের দেখাশোনা করবে। বর্তমানে ৪৬ জন দক্ষিণ কোরীয় কমফোর্ট উইমেন বেঁচে আছেন।

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে এ ঐতিহাসিক চুক্তির পর একাত্তর সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের ২ লাখ নারীর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি আবারো আলোচনা উঠে এসেছে। জাপানের মতো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এতো শক্তিশালী একটি দেশ যদি নিজেদের অতীতের ভুল বুঝতে পেরে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে পারে, ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে, তাহলে একই ঘটনায় পাকিস্তান কেন বাংলাদেশর কাছে ক্ষমা চাইবে না? এমন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

সাংবাদিক, লেখক ও সমাজকর্মী রিপন রাফির দাবিও একই। জাপানের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তানকেও একাত্তরের ঘৃনিত কাজের জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। জাপানের উদাহরণ টেনে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে পাকি আর্মিরা আমাদের মা বোনদের যেভাবে ধর্ষন আর নির্যাতন চালিয়েছিল তার জন্য কি তারা ক্ষমা, ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা চিন্তা করেছে কখনো…..!! একটা দেশ কতটা কুলাঙ্গার সেটা পাকিস্থান কে দেখলেই বোঝা যায়……’

তবে এ ইস্যুতে পাকিস্তানকে যথাযথ চাপ দিতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রিপন।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯৩ সালে এক বিবৃতিতে জাপান কোরীয় কমফোর্ট উইমেনদের কাছে ‘গভীর ক্ষমা ও অনুশোচনা’ প্রকাশ করেছিল৷ কমফোর্ট নারী হিসেবে তাঁরা ‘সীমাহীন কষ্ট’ এবং ‘অনিরাময়যোগ্য শারীরিক ও মানসিক ব্যথা’ সহ্য করেছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়৷

চুক্তি সইয়ের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভুক্তভোগীদের প্রতি ‘তাঁর অন্তরের অন্তস্থল থেকে ক্ষমা ও অনুশোচনা’ প্রকাশ করেছেন বলে জানান৷
যদিও চুক্তি স্বাক্ষরের পরও দক্ষিণ কোরিয়ায় এ নিয়ে চলতি বিতর্ক আর উত্তেজনা থেমে নেই।



মন্তব্য চালু নেই