জাবি পরিবহন অফিসের অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের অব্যবস্থাপনা আর প্রশাসনের অমনোযোগিতার কারণে পরিবহন সঙ্কট গত কয়েক মাসের মধ্যে চরম আকার ধারণ করেছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পরিবহন অফিসের অব্যবস্থাপনা, নষ্ট হওয়া বাস মেরামত না করা, স্বল্পসংখ্যক বাস বরাদ্দ দেয়া, রুটের সংখ্যা না বাড়ানো এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি বাসের মধ্যে ৯টি বাস অর্ডার আউট হয়েছে এবং অন্য ৭টি বাসের অবস্থা খুবই জীর্ণ যা দৈনন্দিন মেরামতের ওপর পরিচালিত হয়। এই কয়েকটি বাস দিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ১৩ হাজার শিক্ষার্থীর পরিবহনের জন্য যথেষ্ট নয়। পরিবহন সঙ্কট মোকাবেলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার্ষিক প্রায় ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ৮টি চায়না ডবল ডেকারসহ ১২টি বাস ভাড়া নেয়া হয়েছে যার অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। এসব ভাঙাচোরা ও জীর্ণ বাস দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে জাবির পরিবহন।

জাবি ট্রান্সপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, একটি রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংক ও বেসরকারী দাতাদের কাছ থেকে ৪টি মিনিবাস গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি মোট ১.২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষকদের জন্য আরও দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস কেনা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬টি মিনিবাসসহ অবশিষ্ট সাতটি বাস শুধু শিক্ষক এবং কর্মচারীদের বহন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাস সঙ্কট থাকলেও তাদের জন্য কোন বাস কেনা হচ্ছে না।

জাবি পরিবহন অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার বলেন, পুরনো অকেজো বাসগুলোর মধ্যে ৩টি বাস বিক্রি করা হয়েছে। অকেজো বাসগুলো ঠিক করতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন এবং ইতোমধ্যে উপাচার্যের কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি নোটিস পাঠানো হয়েছে। সঠিকভাবে অকেজো বাস মেরামতে কোন বরাদ্দ নেই, পাশাপাশি অনেক টাকা দৈনিক অস্থায়ী মেরামতের জন্য ব্যয় হচ্ছে বলে তিনি জানান। ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা যাতায়াতের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সাধারণত ক্যাম্পাসের বাস ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বাস বরাদ্দ না থাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অধিকাংশ সময় শিক্ষার্র্থীদের বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, মাঝে মাঝে ছাত্রীদের জন্য পাবলিক বাসে যাতায়াত করাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ের বাসেও তাদের দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। পাশাপাশি মাত্র দুটি রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস দেয়া হয়েছে। যেখানে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৫টি রুটে বাস চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন রুট চালু করার বেশ জোড়ালো দাবি থাকলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঢাকা-ক্যাম্পাস যাতায়াতের ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২২টি ট্রিপ চালু রয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১৩টি ট্রিপ চালু আছে। শিক্ষার্থীদের ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানো বিশেষ প্রয়োজন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ভর্তির সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিবহন ফি বাবদ ২ হাজার টাকা নিলেও পরিবহন খাতে কোন উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। প্রতিবছর এই পরিবহন ফি বাবদ প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা নেয়া হয় নবীন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যা দিয়ে একটি নতুন বাস কেনা সম্ভব। কিন্তু তার পরও শিক্ষার্থীদের জন্য কোন বাস কেনা হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই