জামানতবিহীন ঋণে ব্যাংকগুলোর অনীহা

নিজের বুটিক ফ্যাশনের ছোট্ট একটি দোকান আছে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার শারমিন সুলতানার। তার ফ্যাশনের পরিধি কিছুটা বাড়াতে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য গেলেন অগ্রণী ব্যাংকের নারিন্দা শাখায়।

কিন্তু ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বদলি হবেন এই অজুহাতে তিনি শারমিন সুলতানার কোনো কথাই শোনেননি। যার জন্য ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শারমিন সুলতানার আবেদন গ্রহণ করেননি।

এরপর শারমিন হতাশ না হয়ে নিজের বুটিক ফ্যাশনে পুঁজি বাড়ানোর জন্য গেন্ডারিয়ার রুপালি ব্যাংকে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন কাগজপত্রসহ আবেদনপত্রও গ্রহণ করেছিলেন ব্যাংকের ওই শাখা। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাস ঘোরানোর পর ওই ব্যাংক তাকে কোনো ঋণ দেয় নি। স্থায়ী সম্পত্তির জামানত চেয়েছিলেন। কিন্তু তার স্থায়ী জামানত দেওয়ার মত কোনো সম্পত্তি ছিল না। ফলে এখানেও ফেরত আসতে হয়েছে তাকে খালি হাতে।

নতুন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপণে বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৪৫ বছরের যেকোনো নতুন উদ্যোক্তার অভিজ্ঞতা সার্টিফিকেট বা কাজের ওপর লেখাপড়া অথবা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আর প্রতিষ্ঠানটি হতে হবে উদ্যোক্তার নিজের। প্রতিষ্ঠানটির ২০ শতাংশ তার নিজের মূলধন থাকতে হবে। আর যদি কোনো জামানত না থাকে তাহলে নতুন উদ্যোক্তা ১০ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারে। এসব কিছু থাকা সত্ত্বেও ঋণ পাননি শারমিন সুলতানা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান ব্যাংকগুলোকে সাধারণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে বলে আসছেন। গভর্নরের যু্ক্তি সাধারণ মানুষ ব্যাংকের টাকা মারে না। টাকা মেরে দেয় ধনীরা।

এদিকে চলতি বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে (এসএমই) ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৮ দশমকি ৫৩ শতাংশ বেশি। এককভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বনির্ধারিত লক্ষ্যের ভিত্তিতে এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর ১ লাখ ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে সিএসএমই খাতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ হিসেবে বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে।

সিএসএমই খাতে নন পারফর্মি লোন (এনপিএল) প্রায় ৯.৬ শতাংশ। যা নিম্নমুখী। সবচেয়ে বড় বিষয় হল নারীদের ক্ষেত্রে এটা মাত্র ২ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর শাহা বলেন, ‘ব্যাংক যদি কাউকে ঋণ বিতরণে অনীহা প্রকাশ করে তাহলে আমাদের এসএমই বিভাগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নতুন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কোনো রকম হয়রানিও করা যাবেনা।’

এসএমই অ্যাণ্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘আমরা ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে উৎসাহ প্রদান করছি। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে নিয়ে বিভিন্ন মিটিং করছি। সার্কুলার দিয়েছি। গ্রাহকদের অভিযোগের সমস্যার সমাধানও করি। কিন্তু পুরো বাংলাদেশের চিত্র তো আর তুলে আনা যাবেনা। তবে এটা শহরে কিছুটা কমে এসেছে, গ্রামে নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করে ব্যাংকগুলো।’

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর মাথায় ঢুকে আছে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া যাবেনা। কারণ যার অধীনে ঋণটি দেওয়া হয়। গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলে অবসরে যাওয়ার পরও তাকে ওই ঋণ পরিশোধ করে যেতে হবে।

ব্যাংকগুলো কর্তৃক উচ্চহারে সুদ নেওয়া প্রসঙ্গে স্বপন কুমার রায় জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বারবাব যৌক্তিকহারে সুদ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সার্কুলারের মাধ্যমে অনেকটা পরোক্ষভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগে সুদ বেশি নেওয়া হলেও এখন আস্তে আস্তে কমে আসছে। আশা করা হচ্ছে ২০১৭ সালের মধ্যে এটা সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসবে।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই