জামায়াত নিষিদ্ধে বিল মন্ত্রিসভায় উঠছে সোমবার

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্য সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং অপরাধী সংগঠনের বিচার সহজ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, বিলের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতি পেলে আগামি সোমবার বিলটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। খসড়া বিলে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলকে নিষিদ্ধের ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের হাতে অর্পিত করার কথা বলা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্ট মাসে তদন্ত শুরু হয়। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা। ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন টিমের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ।

কিন্তু আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনে সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিধান নেই বলে মন্তব্য করেন। তার এই মন্তব্যের পর প্রসিকিউশন টিম তদন্ত প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া থেকে বিরত থাকে। এই অবস্থায় আইন মন্ত্রণালয় সংগঠনেরও শাস্তির বিধান রেখে আইনটি সংশোধনের কাজ শুরু করে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই সংশোধনীতে ট্রাইব্যুনালস আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ‘ব্যক্তি’ শব্দটির পর ‘অথবা সংগঠন’ শব্দগুলো সন্নিবেশ করা হচ্ছে। আরেকটি ধারায় ‘দায়’ শব্দটির পরিবর্তে ‘অথবা সাংগঠনিক দায়’ শব্দগুলো এবং অপর ধারায় ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠন’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংগঠন হিসেবে দোষী প্রমাণিত হলে ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান আইনে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করার বিধান থাকলেও সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তাই ওই শব্দগুলো সন্নিবেশ ও প্রতিস্থাপন হলে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচার করতে আইনি বাধা থাকবে না।

এই সংশোধন হলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ চলাকালে দ্বিতীয় দফায় আইন সংশোধন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।

কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গড়ে উঠে গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদের মুখে ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিধান রেখে আইনটির সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়।



মন্তব্য চালু নেই