জালিয়াতি: ঢাবি প্রক্টরের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তিপরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জালিয়াত চক্রের সদস্য আটক করেও সাংবাদিকদের তথ্য দিতে গড়িমসি করা, আটক একজনকে ছেড়ে দেয়া এবং লঘুশাস্তি দেয়ার ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলীসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, শুক্রবারের ভর্তিপরীক্ষায় জালিয়াতির চেষ্টাকালে কয়েকজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলীর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা কয়েকদফায় চেষ্টা চালালেও তথ্য দিতে গড়িমসি করেন প্রক্টর। সাংবাদিকরা তার রুমে ঢুকলে তিনি প্রতিবারই তাদের কোনো তথ্য না দিয়ে চলে যেতে বলেন। তৃতীয় দফায় তার রুমে ঢোকার পর তিনি আটককৃতদের নাম জানালেও বেশি কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়াও সেখানে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিদর্শক ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট সারাওয়াত মেহজাবিন তাদের শাস্তির বিষয়টিকে ‘সেনসিটিভ ইস্যু’ বলে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষা চলার সময় প্রশাসন তিনজনকে আটক করে। অথচ প্রক্টর জানান দুজনের কথা। বাকি একজনের কথা তিনি পুরোপুরি চেপে যান। পরবর্তীতে গোপন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, শেরেবাংলা সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে আরো একজনকে আটক করা হয়।

এ ব্যাপারে একজন শিক্ষক জানান, শেরেবাংলা সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে যাকে আটক করা হয়েছিল তিনি পালিয়ে যান।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, আটক করার পর একজন প্রশাসনের হাত গলে পালায় কীভাবে? পালালেও তা সাংবাদিকদের জানানো হয়নি কেন? তার নাম একবারও উচ্চারিত হয়নি সবার সামনে।

এছাড়াও আটককৃতদের শাস্তির বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে সবার মনে। ভর্তিপরীক্ষায় মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও দুজনকে মোবাইলে উত্তর নেয়ার চেষ্টা করার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। অথচ তাদের মাত্র ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগের পরীক্ষাগুলোতে বিভিন্ন অভিযোগে আটককৃতদের ন্যুনতম এক বছরের শাস্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ১৬ অক্টোবর ‘গ’ ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষায় একই প্রবেশপত্রের দুইজনকে পাওয়ায় দোষী সঞ্জয় কুমার সাহানী নামে এক পরীক্ষার্থীকে একবছরের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার সময় কাউকে আটক করা হলে সাংবাদিকদের সামনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো। এছাড়া তাদের আটক করে সাংবাদিকদের খবর দেয়া হতো। অন্যদিকে, ভর্তিপরীক্ষায় জালিয়াতি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাংবাদিকরাও সবসময় সতর্ক থাকতেন। গত কয়েকদিন আগে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে জালিয়াত চক্রের দুই সদস্যকে ধরিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিপদে তাকে কাছে পান না তারা। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব তার উপর থাকলেও তারা যেকোন বিপদে তাকে ফোন করলে বেশিরভাগ সময়ই তিনি ফোন রিসিভ করেন না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।



মন্তব্য চালু নেই