জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এখনই যেতে পারেন ‘স্বর্গের বিছানা’ সিলেটের বিছনাকান্দি (ভিডিও)

পাথর বিছানো বিশাল বিছানায় জলের স্বত:স্ফুর্ত আনাগোনা। পাশেই নীলচে পাহাড়ের সারি। যায়গার নাম বিছনাকান্দি। স্বর্গের বিছানা বিছনাকান্দি। আমার এক বন্ধুর মতে বিছনাকান্দি হল, জীবন-যাপনের যাবতীয় ক্লান্তি বিসর্জনের জন্য চমৎকার যায়গা।’ এমন অপরূপ সৌন্দর্যগাঁথা দেখার জন্য সড়ক পথে একরাতে চলে এলাম সিলেট।

মেঘাবৃত আকাশ আর বৃষ্টিঝরা দিন না হলে বিছনাকান্দির সৌন্দর্য ঠিক বোঝা যায়না! সকালে ঘুম থেকে উঠে মুষলধারায় বৃষ্টি দেখে মন তাই খুশিতে নেচে উঠলো। ঠিক সাড়ে দশটায় আমরা একটি লেগুনায় চেঁপে যাত্রা শুরু করলাম। মালিনিছড়া চা বাগান সালুটিকর আর বিমান বন্দর রোড হয়ে দেড় ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম হাদারপার বাজার। এখানে খানিক বিশ্রাম।

unnamed-3

তারপর সবাই মিলে ভূনা খিচুরী খেয়ে হাদারপার খেয়াঘাট থেকে নৌকায় চেঁপে বিছনাকান্দি। নৌকা আমাদের নিয়ে যতই বিছনাকান্দির দিকে এগোচ্ছিল ততই তার সৌন্দর্যছটা যেন উপচে বের হচ্ছিল। সঙ্গে মিলেমিশে একাকার ছিল নদীর এপার আর ওপারের অপার সৌন্দর্য। এভাবেই ঠিক পনের মিনিট পর আমরা পৌঁছে যাই বিছনাকান্দি।

unnamed

অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের সমাহার। কল্পনাও করতে পারিনি। বিস্ময়কর মানে এতটাই বিস্ময়কর। কাছেই দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা আর সে পাহাড় থেকে প্রবাহিত সু-শীতল ঝর্নাধারার তীব্র প্রবাহ। এখানে পাথরে ভরা পুরো এলাকা। পানিতে বিছানো রয়েছে মোটা-শক্ত, ছোট-বড় হাজার কোটি পাথর। সে সব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরন।

11720740_1667909350106166_600934893_n

এ সব পাথর মেঘালয় পর্বতমালার ওপর থেকে প্রবাহিত ঝর্নার ধারায় চলে এসেছে পিয়াইন নদীর বিছনাকান্দি অংশে। এক মনোরম যায়গা বিছনাকান্দি। মুগ্ধ চিত্তে চেয়ে দেখি চারপাশ। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ি পাথর ভরা পিয়াইন নদীর সু-শীতল সেই জলে, শরীর এলিয়ে দেই পাথর জলের বিছানায়। যে বিছানা ছেড়ে কোন কালেই উঠতে ইচ্ছে করবেনা!

11715189_1667909383439496_99308340_o

প্রয়োজনীয় তথ্য

বিছনাকান্দির এমন সৌন্দর্য বরষা চলে গেলে বা পানি কমে গেলে আর থাকেনা। তখন এটা হয়ে যায় একটা মরুদ্যান। পাথর বহন করার জন্য এখানে চলে অজস্র ট্রাক আর ট্রাকটর। সুতরাং অক্টোবর পর্যন্ত বিছনাকান্দি যাবার মোক্ষম সময়। মন চাইলে এখনি চলে যেতে পারেন। বিছনাকান্দি যাবার কয়েকটা পথ রয়েছে।

11714289_1667909333439501_1800308582_n

আপনি চাইলে নদী পথে যেতে পারেন। আবার সড়কপথে নিজস্ববাহন, সিএনজি চালিত অটো রিকসা কিংবা লেগুনা ভাড়া করে দল বেঁধে যেতে পারেন। নদী পথে গেলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে পাংখুমাই। সেখান থেকে ট্রলারে চেঁপে বিছনাকান্দি। পাংখুমাই হয়ে বিছনাকান্দি গেলে বাড়তি পাওনা এখানকার বিশাল ঝর্না আর পিয়াইন নদীর অপরূপ রূপসূধা। পাংখুমাই যেতে সময় লাগে দেড়ঘন্টা।

11713526_1667909376772830_2030718267_n

সেখান থেকে বিছনাকান্দি আরও দেড় থেকে দুই ঘন্টার পথ। সড়কপথ হলে সিলেট শহর থেকে যে কোন বাহনে চেপে চলে যান হাদারপার বাজার। সেখান থেকে নৌকায় বিছনাকান্দি। যেভাবেই যান হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিঁচুড়ি খালি পেটে অমৃত সুখ দেবে। আমার পরামর্শ সড়ক পথে বিছনাকান্দি। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে হাদারপার খেয়াঘাঁটে নৌকার মাঝি যাচ্ছে তাই ভাড়া চাইবে। দরদাম ঠিক করে কম পক্ষে তিনঘন্টার জন্য হাদার পার থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে তবেই বিছনাকান্দির পথ ধরুন। ভাড়া ৬০০টাকার বেশী না।

11667098_1667909370106164_1562891260_n

11717152_1667909343439500_533083094_n

11696689_1667909360106165_1921198310_n

11694351_1667909353439499_1862842211_n

ভিডিও:

ফারুখ আহমেদ, প্রকৃতি লেখক

[email protected]



মন্তব্য চালু নেই