জেনে নিন এক ভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কথা

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক, যার সাহায্যে কোটি কোটি রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু কোনো কারণে যদি এ অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করে তাহলে তা মারাত্মক বিপদের ইঙ্গিত করে। সম্প্রতি গবেষকরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনকারী জীবাণুর সন্ধান পাচ্ছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে এইচটি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের যত অগ্রগতি হচ্ছে, তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যাকটেরিয়াদের জীবনীশক্তিও। এতদিন অ্যান্টিবায়োটিকের কড়া প্রতিরোধে যেসব ব্যাকটেরিয়া আটকে রাখা যেত, তাদেরকে আর আটকে রাখা যাচ্ছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল রপ্ত করে নিয়েছে এই সুপারবাগ।

সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনকারী সুপারবাগ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রধান গবেষক ড. পিটার পিয়ট বলেন, ‘মানুষের অযাচিত কর্মকাণ্ডের কারণে নিরাময়ের অযোগ্য সংক্রমণ থেকে মহামারী হতে পারে, যা পেনসিলিন আবিষ্কারের আগে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছিল।’

ড. পিয়ট এর আগে ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কার করেন এবং এইচআইভির বিরুদ্ধে লড়তে তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রধান গবেষক। ইউএনএইডসের এ নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

গবেষকরা জানাচ্ছেন, সুপারবাগ থামানো সম্ভব না হলে এর মাধ্যমেই বিশ্বের বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। এটি বিশ্বের সব শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিককে নিষ্ক্রীয় করে দেয়। মনে করা হচ্ছে, অযাচিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণেই এই সুপারবাগের উৎপত্তি। বিজ্ঞানীরা এই সুপারবাগের কুপ্রভাব সম্বন্ধে বিশ্বকে সাবধান করে দিয়েছেন।

গবেষকরা একটি বিশেষ জিনকে চিহ্নিত করেছে যা সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া তৈরী করে। যেমন ই-কোলাই, যা কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি দারুণ প্রতিরোধী। এই অ্যান্টিবায়োটিকস গুলির মধ্যে পলিমিক্সিংস খুবই অন্যতম। যেখানে সকল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যর্থ, সেখানে একমাত্র পলিমিক্সিং সংক্রমণ দমিয়ে রাখতে সক্ষম ছিল। এই বিশেষ জিন খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়ায় প্রবেশ করে ব্যাকটেরিয়াকে প্রবল ক্ষমতাশালী করে দেয়, যে ক্ষমতায় ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ মহামারি ঘটাতে পারে।

জিন দ্বারা পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ যে কোনও সংক্রমণকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। ফুসফুস, রক্ত ও অস্ত্রোপচার জনিত সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। সুপারবাগ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ক্ষমতাকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করতে পারে এক বিশেষ জিনের মাধ্যমে।

সুপারবাগের কারণ হিসেবে গবেষকরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন তুচ্ছ কারণে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণকে। অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অযাচিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া এর সঠিক মাত্রা না জেনেই অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন। অনেকে আবার সম্পূর্ণ চিকিৎসা না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে। এতে সুপারবাগ আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অনেক চিকিৎসকও প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করেন, যা সুপারবাগের বৃদ্ধিকে উৎসাহ যোগায়।



মন্তব্য চালু নেই