জেনে নিন চিনি কি সত্যিই ক্যান্সার বৃদ্ধি করে?

যত দিন যাচ্ছে, চিনির ক্ষতিকর দিক ততই মানুষের সামনে আসছে। যদিও চিনি শুধু স্বাস্থের ক্ষতি করে তাই নয়, এটি ক্যান্সারের মতো রোগেরও যে কারণ, সে বিষয়টি আগে অনেকেরই জানা ছিল না। সম্প্রতি এ বিষয়ে কিছু গবেষণায় চিনির ক্ষতিকর দিকটি পরিষ্কার হয়েছে। তাই চিনির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বহু মানুষ। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ফক্স নিউজ। সম্প্রতি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, চিনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক ক্যারি ড্যানিয়েল-ম্যাকডোগ্যাল।

তিনি জানান, ক্যান্সারের সঙ্গে চিনি বা মিষ্টি পদার্থের যোগসূত্র পাওয়ার খবরটি। গবেষণায় যা জানা গেছে গবেষকরা জানান, চিনি ও মিষ্টি পদার্থের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। বাড়তি চিনি গ্রহণের ফলে দেহের কোনো কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেহের মাত্রাতিরিক্ত চিনি আমাদের পেটের উপকারি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। এতে বিপাক প্রক্রিয়ায় গণ্ডগোল তৈরি হয়। আরেকটি গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ক্যাথি ম্যাগনুসন। তিনি ওয়াইও স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। তিনি জানান, ‘ফ্যাট ও চিনি দেহের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া সিস্টেমের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার এটি একটি কারণ।’ সুইডিশ একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত মাসে। তাতে জানা গেছে, যারা দিনে দুই বার তার বেশিবার চিনিযুক্ত সোডা বা অন্য মিষ্টি পানীয় পান করেন তাদের গলব্লাডার ও পিত্তথলির ক্যান্সারের আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। আরও কিছু গবেষণায় চিনির কারণে শিশুর স্বাস্থ্যগত ক্ষতির বিষয়টি জানা যায়। বড়দের মাত্রাতিরিক্ত চিনি গ্রহণে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া ও অপুষ্টির মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেভাবে ক্যান্সার হয় বাড়তি চিনির প্রভাবে দেহে কিভাবে ক্যান্সার হয় সে সম্পর্কেও তথ্য প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত চিনি দেহকে ইনসুলিন প্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তোলে। এতে এতে দেহ হরমোনটি উৎপাদন বাড়ানো শুরু করে। একই সময়ে ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টর (আইজিএফ) বৃদ্ধি পায়। এ আইজিএফই দেহের কিছু কোষকে ক্যান্সারে পরিণত করে। এ বিষয়ে ড্যানিয়েল-ম্যাগডগাল বলেন, ‘আপনি যখন বাড়তি চিনি বা কার্বহাইড্রেট এবং কম আঁশযুক্ত খাবার খাবেন তখন আপনার দেহের ইনসুলিন বাড়বে এবং দেহে ফ্যাট হিসেবে এনার্জি সংরক্ষিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, স্থূলতা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ আর তাই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে দেহের ওজনও কম রাখা উচিত।’

চিনি ত্যাগ করুন চিনি সম্পূর্ণভাবে খাবার থেকে বাদ দিলে তাতে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে মনে করে অনেকেই তা বাদ দেন না। তবে গবেষকরা বলছেন, চিনি সম্পূর্ণ ত্যাগ করলে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। চিনি ছাড়াই রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা ঠিক রাখা সম্ভব। বিভিন্ন খাবারে রয়েছে চিনি, এগুলোই মূলত দেহের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। চিনির বিকল্প হিসেবে মিষ্টি ফলমূল কিংবা ফলের নির্যাস ব্যবহার করার কথা বলছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে খেজুর, শুকনো আপেল, নারিকেল, কিশমিশ ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া গুড় ও মধুকে চিনির একটি ভালো বিকল্প হিসেবে বলছেন গবেষকরা। এতে চিনির মতোই ক্যালরি রয়েছে। গুড়ে চিনির মতোই কার্বহাইড্রেট রয়েছে। তবে এগুলো ডায়াবেটিস ও ওজন কমানোয় আগ্রহীদের বেশি খাওয়া যাবে না। মধু ও গুড়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল ও ভিটামিন রয়েছে, যা চিনিতে নেই। এক্ষেত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, অর্গানিক বা প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরিত গুড় ও মধু সবচেয়ে ভালো।



মন্তব্য চালু নেই