জেনে নিন দেহের পানিশুন্যতা সম্পর্কিত ৭টি ভুল ধারণা

মানুষের দেহের প্রতিটি কোষেরই সুস্থ থাকার জন্য পানির দরকার হয়। তবে গরমের সময় একটু বাড়তি সতর্কতা লাগে। শরীরে পানিশুন্যতা সম্পর্কিত অনেক গুজব বা ভুল ধারণাও প্রচলিত আছে। এখানে এমন ৭টি ধারণার খণ্ডন করে যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. গুজব: পানিশুন্যতা অস্বস্তিকর কিন্তু বিপজ্জনক নয়।
সত্য: শরীরে পানিশুন্যতার কারণে আমরা প্রায়ই হয়তো হালকা মাথা ব্যাথা, ক্লান্তি, পেশাবে কম হওয়া বা ঘাম কম বের হওয়ার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারি। কিন্তু এতে কোনো সমস্যা মারাত্মক রুপও ধারণ করতে পারে এবং এমনকি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার হতে পারে। পানিশুন্যতা মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়া, কিডনির কার্যক্রমে ব্যর্থতা এবং পরিণতিতে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

২. গুজব: আপনি যদি তৃষ্ণা বোধ করেন তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি ইতিমধ্যেই পানিশুন্যতায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সত্য: তৃষ্ণার অনুভুতি আপানাকে পানি পানের জন্য তাগাদা দেয়। তবে যখন আপনি তৃষ্ণার্ত অনুভব করবেন তখন যে আপনি বিপজ্জনকভাবে পানিশুন্যতায় আক্রান্ত হয়েছেন এমনটা ভাবা ঠিক নয়। এমনও হতে পারে মাত্র ১% পানিশুন্যতার কারণে আপনি তৃষ্ণার্ত হয়েছেন। ফলে সামান্য তরল পানেই হয়তো আপনার তৃষ্ণা কেটে যাবে।

৩. গুজব: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা দরকার।
সত্য: এই সেকেলে ধারণাটি এখনো মূলত বোতলজাত পানি কম্পানিগুলোর কারণেই বেশি প্রচারণা পাচ্ছে। তাহলে প্রকৃতই আপনার প্রতিদিন কত গ্লাস পানি পান করা দরকার?
দ্য ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন (আইওএম) এর পরামর্শ মতে, একজন পুরুষের প্রতিদিন গড়ে ৩ লিটার পানি পান করা দরকার। অন্যদিকে, একজন নারীর দরকার প্রতিদিন গড়ে ২.২ লিটার পানি পান করা। তবে অন্যদের মতে, তৃষ্ণার্ত না হলে জোর করে পানি পান করার দরকার নেই।

৪. গুজব: পেশাব পরিষ্কার থাকলে বুঝতে হবে শরীর পর্যাপ্ত আর্দ্র আছে।
সত্য: পেশাব পরিষ্কার থাকলেই যে আপনার শরীর পানিশুন্যতায় ভুগছে না এমনটা ভাবা ঠিক নয়। বরং আপনার দেহে যথেষ্ট আর্দ্রতা বজায় থাকার লক্ষণ হলো আপনার পেশাবের রঙ হালকা হলুদ হওয়া।

৫. গুজব: অতিরিক্ত আর্দ্রতা বলে কিছুই নেই
সত্য: অতি আর্দ্রতাও মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে। তবে এমনটা খুব কমই ঘটে থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পানে হাইপোন্যাট্রেমিয়া নামের রোগ হতে পারে। এতে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা এতটাই মিশে যায় যে, দেহকোষগুলো ফুলে যেতে শুরু করে। হাইপোন্যাট্রেমিয়ার লক্ষণগুলো হলো- ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, মাথাব্যাথা, মানসিক বিশৃঙ্খলা ও অবসাদ। এমনকি এতে খিঁচুনি এবং কোমার মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে।

৬. গুজব: শরীরচর্চাকারীদের ক্রীড়া পানীয় দরকার হয়।
সত্য: আপনি যদি এক ঘন্টা বা তার কম সময় ধরে শরীরচর্চা করেন তাহলে শুধু পানি পান করলেই চলবে। তবে এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে শরীরচর্চা করলে গ্লুকোজ জাতীয় পানীয় পান করার দরকার পড়বে।

৭. গুজব: কফি পান করলে দেহ অনার্দ্র হয়ে পড়ে।

সত্য: অতিরিক্ত কফি পানেই শুধু এমনটা ঘটতে পারে। তবে স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পানে আপনার দেহে বরং প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ হবে। তবে প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম বা এর বেশি পরিমাণ কফি পানে দেহ অনার্দ্রতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই