জেনে নিন পেঁপে দুধের বিস্ময়কর সব উপকারিতা ও দারুণ সহজ রেসিপি

আমরা অনেক সময় না জেনেই এমন অনেক খাবার খাই যেগুলোর উপকারিতা অপরিসীম।পেঁপে দুধ হচ্ছে এর মাঝে অন্যতম। পেঁপে দুধ একটি এশিয়ান খাবার। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, হংকং, ভিয়েতনামে এটি বেশ জনপ্রিয় খাবার।আমাদের দেশেও অনেকেই পেঁপে এভাবে খান। কিন্তু ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর এই পানীয়টির পুষ্টি উপকারিতা অনেকের অজানা। শুধু বড়দের জন্য নয় এটি ছোটদের জন্যও স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি উত্তম পানীয়।

পেঁপে দুধের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে কিছু আজ আপনাদের জন্য উল্লেখ করছি।

খাদ্য আঁশে পরিপূর্ণ

যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের জন্য বড় এক গ্লাস পেঁপে দুধ মহিলাদের দৈনিক চাহিদা ২৫ গ্রাম খাদ্য আঁশের প্রায় ১০% পূরণ করতে সক্ষম। এবং পুরুষদের প্রতিদিনের চাহিদা ৩৮ গ্রাম খাদ্য আঁশের প্রায় ৭% পূরণ করে। সাধারণত খাদ্য আঁশ মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর চলাচলের সাহায্য করে। এছাড়া এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগের এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ক্যালসিয়ামে ভরপুর

দুধ আর পেঁপে মিশ্রিত এই পেঁপে দুধে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। যে ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতকে সুস্থ শক্তিশালী করে। ক্যালসিয়াম রক্তচাপ এবং দেহের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

উচ্চমাত্রার ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর

প্রতি কাপ পেঁপে দুধে প্রায় ৮৮.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। এই ভিটামিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সেই সাথে ক্ষত সারাতে সাহায্য করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর কারনে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, সাধারণ রোগের জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে যেমন ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদি।এছাড়া পেঁপে দুধ ভিটামিন এ এবং ফসফরাসে পরিপূর্ণ। ভিটামিন এ চোখের ভাল দৃষ্টি শক্তির জন্য প্রয়োজন এবং ভালো হৃদস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন ফসফরাস।

ত্বকের জন্য উপকারিতা

পেঁপে দুধ ভিটামিন এ এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস হওয়ায় ফলে এটি ত্বকের মরা কোষ উঠাতে সাহায্য করে।এতে নিম্ন মাত্রার সোডিয়াম থাকে বলে এটি ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে অপ্রত্যাশিত ব্রণ ও ফুসকুড়ির থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে করে তোলে নমনীয় এবং মসৃণ। এটি প্রাকৃতিক exfoliant যা ত্বকের বলিরেখা, ত্বকের বিবর্ণতা দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে করে তোলে সতেজ ও উজ্জ্বল।

কৃমির চিকিৎসায়

পেঁপে দুধে থাকে ক্যারোটিন। এই উপাদানটি যদি প্রতিদিন খাওয়া যায় তাহলে তা কৃমির চিকিৎসায় বেশ ভাল কাজ করে। পেঁপে দুধের প্রদাহ বিরোধী গুনাগুন থাকার ফলে তা ক্ষত সারানোর সাথে সাথে এর লাল দাগও দূর করে।

চুলের জন্য

চুলের জন্য পেঁপে দুধের রয়েছে অসাধারণ উপকারিতা। এটি চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে, চুলকে মজবুত করতে এবং লালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেঁপে দুধ খেলে তা খুশকি নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলকে করে মোটা, স্বাস্থ্যউজ্জ্বল এবং মজবুত।

পেশীর কোষ পুনর্গঠনে

পেঁপে দুধ শুধুমাত্র আমাদের দেহের শক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করে না সেই সাথে এটি পেশীর কোষ পুনর্গঠনেও সাহায্য করে। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত দুধ, পেঁপে দুধে থাকে বলে তা পেশীর সুস্থতার ও গঠনের জন্য ভাল কাজ করে।

হজম ক্রিয়াকে উন্নত করে

পেঁপে দুধে কার্যকরী প্রোটিন থাকার ফলে তা বিপাকীয় কার্যক্রমে সাহায্য করে। এটি প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের হজমের জন্য হজমতন্ত্রের প্রয়োজনীয় বিপাকীয় এনজাইম উৎপন্ন করতে এবং সেই সাথে এটি হজমে সাহায্য করে এবং বমি বমি ভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ফুসফুসের রোগ অ্যাম্ফিসেমা প্রতিরোধে

যারা ধুমাপায়ী তারা অবশ্যই পেঁপে দুধ পান করবেন। পেঁপে দুধে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন এ অ্যাম্ফিসেমা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যারা খুব বেশি ধূমপান করেন তাদের অবশ্যই খাওয়া উচিত।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য উপকারী

যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত বিশেষ করে যাদের কোলন ক্যান্সার তারা পেঁপে দুধ খেলে খুবই উপকার পাবেন।পেঁপে দুধে থাকা বিটা ক্যারোটিন বিপদজনক কোষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

কীভাবে তৈরি করবেন পেঁপে দুধ?

বিভিন্ন ভাবেই পেঁপে দুধ তৈরি করা যায়। সাধারণত দুধ আর পেঁপে ব্লেন্ড করেই বানানো হয়। যাদের ওজন বেশি না তারা চিনি মিশিয়েও খেতে পারেন। এছাড়া স্বাদ অনুযায়ী দিতে পারেন মধু, দারুচিনি গুঁড়ো ইত্যাদি। এখানে বেসিক পেঁপে দুধের রেসিপি দিলাম।

কী কী লাগবে-

পাকা পেঁপে- ২০০গ্রাম

দুধ- ২০০মিলি

মধু- ২ চা চামচ

দারুচিনি গুঁড়ো- সামান্য

-পেঁপে খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরো করে সব এক সাথে ব্লেন্ডারে নিয়ে ভাল ভাবে ব্লেন্ড করুন। তৈরি হয়ে গেলো স্বাস্থ্যসম্মত মজাদার পানীয় পেঁপে দুধ।

তাই দেরি না করে আজ থেকে পেঁপে দুধ খাওয়া শুরু করুন এবং আগামি ভবিষ্যতকে করুন সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান।

লিখেছেন-

শওকত আরা সাঈদা(লোপা)
জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ
এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্‌থ
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান(স্নাতকোত্তর)(এমপিএইচ)
মেলাক্কা সিটি, মালয়েশিয়া।



মন্তব্য চালু নেই