জেনে নিন শরীরের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়গুলো

আপনার শরীরের কটুগন্ধই কি কোন কক্ষে আপনার উপস্থিতিকে জানান দেয়? প্রতিবছর আপনার জন্মদিনে সুগন্ধি উপহার পান আপনি? মানুষ আপনার পাশে বসা এড়িয়ে চলে? যদি আপনার উত্তরটি হাঁ হয় তাহলে সবচেয়ে অপচ্ছন্দনীয় জিনিসটির কবলে পড়েছেন আপনি, আর তা হল- শরীরের দুর্গন্ধ।
বিশ্বের প্রতিটা মানুষই অনন্য। ত্বকের রঙ, চুলের রঙ, কণ্ঠস্বর, চোখের রঙ এবং অবশ্যই শরীরের গন্ধ প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র। প্রত্যেক ছেলে, মেয়ে, পুরুষ এবং মহিলার শরীরের গন্ধ আলাদা। এই গন্ধ হতে পারে আনন্দদায়ক অথবা বিরক্তিকর। মজার ব্যপার হল একমাত্র শিশুদের গায়ের গন্ধই বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করে। পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্তর এবং মহিলাদের ইস্ট্রোজেন ও অন্যান্য হরমোনের স্তর স্বতন্ত্র গন্ধের সৃষ্টি করে। কারো কারো শরীরের গন্ধ মাত্রাতিরিক্ত খারাপ হয়। যার কারণে তাকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। ত্বকের গ্রন্থি নিঃসৃত ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া অস্বস্তিকর গন্ধের জন্য দায়ী। স্বাভাবিকভাবে ঘামের কোন গন্ধ নেই। কিন্তু শরীরের যেসব স্থানে ঘাম হয় সেখানে যদি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে তাহলে দুর্গন্ধের উৎপত্তি হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, ব্যাকটেরিয়ার গন্ধই শরীরের গন্ধ যার রাসায়নিক বন্ধন ভাঙতে থাকে। আসুন জেনে নিই এই অস্বস্তিকর গন্ধ থেকে মুক্তির উপায়।

১। ধুলাবালি ও দূষণ মুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে প্রতিদিনই গোসল করতে হবে। দিনের শুরুতেই গোসল করে নিন। আপনার শরীরের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে কমতে সাহায্য করবে গোসল। আপনি যদি কর্মব্যস্ত বা সক্রিয় মানুষ হন তাহলে দিনে তিনবার গোসল করুন। গোসলের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া, ময়লা ও ঘাম দূর হয়।

২। এক আউন্স পানিতে দুই ফোঁটা এসেন্সিয়াল ওয়েল মিশিয়ে একটি পরিষ্কার স্প্রে-বোতলে ভরে নিন এবং ডিওডোরেন্ট হিসেবে ব্যবহার করুন। যেহেতু এসেন্সিয়াল ওয়েলে ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদান আছে তাই এটি শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

৩। যদি আপনার চুলে ও মাথার তালুতে দুর্গন্ধ হয় তাহলে, এক মগ পানিতে ৫ টেবিলচামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। চুল ধোয়ার পর এই মিশ্রণটি মাথায় দিন। ৫ মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডা তৈলাক্ততা কমাবে এবং চুলের নোংরা গন্ধ দূর করবে।

৪। রসুন, পেঁয়াজ ও মশলা জাতীয় খাবার খাওয়ার পর ঘন্টা ব্যাপী মুখে দুর্গন্ধ থাকতে পারে। পুদিনা পাতা খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। পুদিনার তীব্র শিতলীকারক প্রভাব আছে যা নিঃশ্বাসকে সজীবতা দান করে।

৫। বগলের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য আপেল সাইডার ভিনেগারে কটন বলে ভিজিয়ে বগলে ঘষুন। আপেল সাইডার ভিনেগার ত্বকের pH স্তর কমায় এবং বগলের ত্বকের ছিদ্র গুলোকে খুলে দেয়। অথবা গোসলের সময় এক মগ পানিতে সাদা ভিনেগার মিশিয়ে হাতের নীচ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের pH কমাবে ও বগলের দুর্গন্ধ দূর করবে।

৬। শরীরের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে ৫০০ মিলিগ্রাম গম ঘাস মিশিয়ে পান করুন। গম ঘাসের ক্লোরোফিল শরীরের দুর্গন্ধ কমতে সাহায্য করে।

৭। ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় গ্রহণ বাদ দিন। ক্যাফেইন অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে যা ব্যাকটেরিয়া পছন্দ করে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে ঘর্ম গ্রন্থি সক্রিয় থাকে এবং অ্যাপোক্রাইনের নিঃসরণকে শান্ত করতে সাহায্য করে যার ফলে শরীরের দুর্গন্ধ কমে।

৮। গোসলের পরে বোরিক এসিড লাগাতে পারেন। বোরিক এসিড ব্যাকটেরিয়ার ছড়িয়ে পরা কমাতে পারে। এটি সুলভ এবং প্রভাবশালি। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকের যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে।

৯। যদি পা বেশি ঘামে তাহলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সব সময় পা আদ্রতা মুক্ত রাখুন। গোসলের পর আঙ্গুলের ফাঁক গুলো ভালো ভাবে মুছে নিন।

১০। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে যেমন- কারো কারো শরীরে অ্যামোনিয়ার মত গন্ধ পাওয়া যায় যা কিডনি বা যকৃতের অসুখের নির্দেশ প্রদান করে, কারো শরীরে নেইল পলিশের মত গন্ধ পাওয়া যায় যা ডায়াবেটিস আছে বলে নির্দেশ করে।

তাছাড়া জিঙ্কের ঘাটতির কারণেও শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করুন, খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করাই সবচেয়ে ভালো তবে সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও গ্রহণ করতে পারেন। আঁট সাঁট পোশাক পরলে ঘাম বেশি হয়, তাই সব সময় ঢিলে ঢালা পোশাক পরুন।



মন্তব্য চালু নেই