জেনে নিন হঠাৎ সন্ত্রাসী আক্রমনের শিকার হলে কি করবেন

হটাৎ সন্ত্রাসী আক্রমনের শিকার হলে কি করা উচিত সেই সম্পর্কিত ব্রিটেন পুলিশের Stay Safe ভিডিও, বিবিসি নিউজ এবং ইয়ুথ কি আওয়াজ অবলম্বনে-

➽হঠাৎ করে বোমা ফাটলে বা গুলির শব্দ শুনলে, সেটাকে ইগনোর করা যাবে না। নাইট ক্লাব, কনসার্টে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে, গুলির শব্দকে অনেকেই মিউজিকের অংশ হিসেবে ইগনোর করে। সেক্ষেত্রে আরো বেশি বিপদের সম্ভাবনা থাকে। তাই সন্দেহ হওয়ার সাথে সাথেই সেখান থেকে বের হয়ে যান। এই পৃথিবীতে আপনার একটাই মাত্র জীবন। কার দোষ, কার ভুল হলে কি হবে সেটা নিরাপদ স্থানে গিয়েও বিশ্লেষণ করা যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

➽আজকের পর কোন রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, শপিং মল, কনসার্ট, মিউজিয়াম বা স্টেডিয়ামে গেলে সেখানকার মূল আকর্ষণ দেখার আগে ফায়ার এক্সিট ভালো করে দেখেন। কোন পাশে কয়টা দরজা আছে ঠিক করে খেয়াল করবেন। সবসময় মেইন গেইট দিয়ে না ঢুকে মাঝে মধ্যে অন্য দরজা দিয়ে ঢুকে সেটার আশপাশ পরিচিত হয়ে নেন।

➽হামলার শিকার হয়ে গেলে বা খুব কাছাকাছি থাকলে, সেই সময় সবাই যেদিকে দৌড় দিচ্ছে সেদিকে দৌড় দিবেন। দাঁড়িয়ে থাকবেন না। কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কে করছে খোঁজ নিতে গেলে আরো বেশি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

➽গোলাগুলির শব্দ শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার আগে বুঝার চেষ্টা করেন- সন্ত্রাসীরা কি এই জায়গার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে নাকি ঐখানে স্থির হয়ে আছে। কোন রাস্তা, বাস/ট্রেন স্টেশন বা এয়ারপোর্ট এর মতো জনাকীর্ণ জায়গায় সাধারণত বোমা আক্রমণ হয় বা সন্ত্রাসীরা কিছুক্ষণ আক্রমণ করে সেখান থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর কোন রেস্টুরেন্ট, নাইট ক্লাব বা অফিস বিল্ডিং বা স্কুল হলে- সেখানে জিম্মি করে রাখার চান্স বেশি।

➽সন্ত্রাসীরা যদি একটু দূরে বা পাশের বিল্ডিংয়ে চলে যাওয়ার স্টাইলে থাকে তাহলে টেবিলের নিচে, ফ্লোরে, হামাগুড়ি দিয়ে স্টোর রুমে গিয়ে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতে হবে। অতি উৎসাহী হয়ে জানালা বা দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলে, সন্ত্রাসীরা দূর থেকে গুলি করে দিতে পারে। সম্ভব হলে স্থানীয় টিভি বা রেডিওয়ের খবরে চোখ রাখেন।

➽আর সন্ত্রাসীরা স্থির হয়ে থাকলে, ওরা কোন জায়গায় আছে সেটা নিশ্চিত হলে অন্য কোন রাস্তা দিয়ে নিরাপদে বের হওয়া যাবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে, নিঃশব্দে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। শুধু নিজের জীবন হাতে নিয়ে বাকি সব জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। অযথা কথা কাটাকাটি, কান্নাকাটি, শলা-পরামর্শ বা বাইরের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে বিপদ ঢেকে আনা যাবে না। আর না বুঝে ভুল পথে বের হতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের সামনে পড়লে জীবন হারানোর সম্ভাবনা থাকবে।

➽নিরাপদ-ভাবে বের হয়ে যাওয়ার না থাকলে সেকেন্ড অপশন হচ্ছে- লুকানো। কোন রুমে লুকাতে পারলে সেই রুমের দরজা ভালো করে আটকে দিতে হবে। কখনোই দরজা বন্ধ করে দরজার পিছনে না দাঁড়িয়ে- অন্য কোন কিছুর আড়ালে লুকিয়ে থাকতে হবে। কোন দেয়ালের পিছনে, শক্ত কিছুর আড়ালে যেতে পারলে ভালো। তবে একটা পর্দার পিছনে দাঁড়িয়েও যদি সন্ত্রাসীদের নজর থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেন-সেটাই আপনার জীবন রক্ষা করবে।

➽আস্তে আস্তে কথা বলা বা মোবাইল ভাইব্রেট মোডে না রেখে সাইলেন্ট মুডে রাখতে হবে। ১০০% নিরাপদ আশ্রয়ে না গিয়ে কাউকে ফোন দেয়া যাবে না। শব্দ করলে আরো বেশি বিপদ হতে পারে। বিশেষ করে, আপনি যদি কোন অন্ধকার নাইট ক্লাব বা কনসার্ট হলে আক্রমণের শিকার হন। শব্দ শুনলে সন্ত্রাসীরা বুঝে ফেলবে আপনি কোন জায়গায় আছেন।

➽লুকিয়ে থাকার পর যদি পুলিশ বা নিরাপত্তা কর্মীরা আসে। তখন ওদের সাথে কথা বা চিল্লাচিল্লি না করে, মাথার উপরে হাত রেখে বের হতে হবে। যাতে নিরাপত্তা কর্মীরা বুঝতে পারে- আপনি সন্ত্রাসী না এবং আপনার কাছে কোন অস্ত্র নেই। এবং পুলিশ কর্মীদের নির্দেশ মেনে চলবেন। যা যা করতে বলবে সেটা করবেন। কোন প্রকাশ প্রশ্ন, হাত নাড়াচাড়া বা সন্দেহজনক আচরণ করলে- নিরাপত্তা কর্মীরাই আপনাকে সন্ত্রাসী ভেবে গুলি করে দিতে পারে।

➽যদি চলমান সন্ত্রাসীদের একদম খুব কাছে থাকেন। তাহলে তিনটা অপশন থাকে-

►এলোপাথাড়ি ভাবে দৌড় দেয়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেশিরভাগ সন্ত্রাসীরা দক্ষ শুটার না। একটু দূরে আঁকাবাঁকা পথে দৌড়ালে তাদের টার্গেট মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে খালি রাস্তায় সোজা দৌড় না দিয়ে, পাশের গলিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এই দৌড় দেয়াটা আপনাকে রক্ষা করতেও পারে আবার বিপদও ঢেকে আনতে পারে। তারপরেও আপনার জীবন যদি একটা বুলেট থেকে দূরে থাকে- একটু চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি?

►মরার অভিনয় করা। ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার সময় এক আইরিশ লোক মরার অভিনয় করে বেঁচে গেছিলো।

►এইটা খুবই রিস্কি একটা অপশন। আপনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আর্মি বা স্পেশাল ফোর্স এবং খুব সাহসী হলে নিজের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের ঘায়েল করার চিন্তা করতে পারেন। সন্ত্রাসী সংখ্যায় একজন হলে এরকম চিন্তা করতে পারেন। তবে সন্ত্রাসীরা সংখ্যায় বেশি হলে বা তাদের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এটা করতে যাওয়া খুবই বিপদজনক। এমনকি আপনি আপনার জীবন হারাতেও পারেন। না বুঝে সিনেমার হিরো হতে যাবেন না। বৈরুতে এডেল টারমস এক আত্মঘাতী বোমাসহ সন্ত্রাসীকে ঘায়েল করতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তিনি ঐ সন্ত্রাসীসহ মারা যান।

➽আপনাকে জিম্মি করে ফেললে এবং পালানোর উপায় না থাকলে – শান্ত থাকার চেষ্টা করেন। ওদের সাথে বিতর্ক, মারামারি বা ওদের সেনসেটিভ টপিক নিয়ে কথা বলতে যাবেন না। মনে রাখবেন-তাদের কাছে লজিক, আইন বা মনুষ্যত্ব নেই। ওরা কি করছে সেটা নীরবে অবজার্ভ করেন। তাদের ক্ষমতা, অস্ত্র, ইন্টারেস্ট বা আলামত খেয়াল করেন। ওদের আনুগত্য মেনে নেয়ার চেষ্টা করেন। চোখ বেঁধে করে কোথাও নিয়ে গেলে- অনুভব করার চেষ্টা করেন-কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। আর ওদের জিম্মিতে থাকার পরে যদি পালানোর চেষ্টা করতে চাইলে-নিজের জীবন বাজি রেখে চেষ্টা করতে হবে। কারণ ধরা পড়লে ওরা আর আপনাকে জীবিত রাখবে না।

➽কোন দেশ, কোন শহরই নিরাপদ না। হামলার শিকার হওয়ার জন্য কাউকে অপরাধীও হওয়া লাগে না। সন্ত্রাসীদের টার্গেট হওয়ার জন্য আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষও হওয়া লাগবে না। তাই হরহামেশা যেখানে সেখানে চেক ইন দিয়ে বেড়াবেন না।

শেয়ার দিন, এটা সবার জানা দরকার। শুধু বাংলাদেশ নয়। বিশ্বের কোন এক কোনায় এটা আপনার বা আপনার কোন বন্ধুর কাজে লাগতে পারে। বিশ্বের কোথাও এখন সন্ত্রাসীদের থেকে নিরাপদ নয়।



মন্তব্য চালু নেই