জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ইঙ্গিত

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ইঙ্গিত দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর ফলে ভোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।

রোববার সচিবালয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের(এমসিসিআই) সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এর ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও আমাদের এখানে কমানো হয়নি। এতে আগের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এখন দাম কমানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এ সময় অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের আন্দোলনের ব্যাপারে বলেন, ‘শিক্ষকরা না জেনে আন্দোলন করছেন। নতুন পে-স্কেলে তাদের যাবতীয় সুবিধা বহাল আছে। তাদের এ আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

বৈঠকে এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এমসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে বিনিয়োগ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুদের হার নিয়ে নানা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল প্রতি ব্যারেলের দাম উঠেছিল ১২২ ডলার। এ কারণ দেখিয়ে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় বাংলাদেশে। তখন পেট্রোল ও অকটেন লিটার প্রতি ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।

এরপরে তেলের দাম কমতে কমতে ৩৮ ডলারে নেমে আসে। তখন প্রথম দিকে বলা হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আগে লোকসান দিয়েছে। সেগুলো মিটিয়ে নিক। একই সঙ্গে মনিটরিংও হোক। যদি দাম কমেই থাকে, তাহলে দেশেও দাম কমানো হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে বিপিসির কোনো উদ্যোগ নেই। এ ব্যাপারে এমসিসিআই নেতারা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি তেলের দামটা দুভাবে নির্ধারণ করা হয়। একটা ৩০ ডলার ধরে, অপরটি ৮০ ডলার ধরে। এখন দাম কমানোর ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারপর সবকিছু ঠিক করতে হবে।’ তবে কবে নাগাদ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

ভবিষ্যতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথক থোক বরাদ্দ রাখা হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা থোক বরাদ্দ রাখার পরিকল্পা করছি। যে প্রতিষ্ঠানের যত টাকা দরকার, তা থোক বরাদ্দ থেকে দেওয়া হবে। বলা হবে, টাকা নাও কিন্তু প্রণোদনা চেয়ো না।’

অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে নাখোশ শিক্ষকরা। তারা আন্দোলনে যাচ্ছেন। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড বহাল ও গ্রেড সমস্যা নিরসনের দাবিতে ১১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় ক্লাস-পরীক্ষা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোও বন্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা আন্দোলনে যাচ্ছেন। আমি সবসময়ই বলি, তারা খুব রিস্কি ডিসিশন নেন। শিক্ষার বিজ্ঞপ্তি তারা। কিন্তু তারা কী করছেন? নাথিং, এবসিলিউটলি নাথিং। আপনারা (শিক্ষকরা) শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য কী আন্দোলন করছেন? তাদের এই আন্দোলন নাথিং।’

শিক্ষকরা বেতন কাঠামো সম্পর্কে না জেনেই আন্দোলন করছেন, মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে, সেই কাঠামো অনুযায়ী তারা কী পাচ্ছেন, কী পাচ্ছেন না, তা না জেনেই তারা (শিক্ষকরা) আন্দোলন করছেন। তাদের এই আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আন্দোলন থেকে সরছেন না আবার সরকারও নিজ সিদ্ধান্তে অটল। এ ক্ষেত্রে সমাধান কীভাবে আসবে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সমাধান দেওয়ার কিছু নেই।’

আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। যদি শিক্ষকরা শাটডাউনে যান তাহলে, সরকার কী করবে জানতে চাইলে বলেন, ‘দেখি না, তারা কতটুকু যেতে পারে।’

সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমরা লম্বা সময় নিয়ে সুদের হারে পরিবর্তন করতাম। কিন্তু এখন আর তা করি না। এখন আমরা দুই-তিন মাস পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই। ছয় মাসেও নেওয়া হয়।’



মন্তব্য চালু নেই