ঝিনাইদহে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া দুই ব্যক্তির সন্ধানের দাবী

এসএম হাবিব, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি : পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ আনিচুর রহমান ও ইদ্রিস আলী পান্না নামে দুই ব্যক্তির সন্ধানের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে তাদের পরিবার। মঙ্গলবার ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে পরিবার দুইটির পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দু’টি পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় কথিত ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে তাদের হত্যা অথবা লাশ গুম করা হতে পারে। ঝিনাইদহ সদর থানার কেশবপুর গ্রামে থেকে ৯ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা আনিচুর রহমানের ভাই আব্দুল মান্নান ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় নিখোঁজ আনিচুরের স্ত্রী রোজিনা খাতুন, মেয়ে আশা খাতুন, ছেলে রাকিব হোসেন, রাতুল হোসেন, বোন সখিনা খাতুন, চাচা দিদার হোসেন, ভাই আব্দুল কুদ্দুস ও মামা হোসেন আলীসহ গ্রামের অর্ধশত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয় গত ৩০ জুলাই রাত ১২টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাস ও দুইটি মটরসাইকেলযোগে সাদা পোশাকের লোকজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী আনিচুর রহমানকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আব্দুল মান্নান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রাতের আধারে ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা থানায় যোগাযোগ করি। কিন্তু থানা থেকে অস্বীকার করা হয়। আনিচুর রহমান নিজ গ্রামে একজন নীরিহ ও ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। মহরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে আনিচুর বিএনপি প্রার্থী খুরশিদ আলমের পক্ষে ভোট করার কারণে প্রতিপক্ষরা প্রশাসনের লোক দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে হয়রানী করতে পারে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে এ ভাবে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তার নাবালক তিনটি সন্তান সর্বক্ষন কান্নাকাটি করছে। এ বিষয়ে সদর থানায় একটি জিডি করা হলেও পুলিশ এখনো নিখোঁজ আনিচের সন্ধ্যান দিতে পারেনি। এদিকে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক ইদ্রিস আলী পান্না ৪ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৪ আগষ্ট পান্নাকে শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের সামনে থেকে সাদা পাশোকের লোকজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে পান্নার স্ত্রী বেগম ইদ্রিস এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার তার স্বামী কাপড় স্ত্রী করার জন্য পার্শ্ববর্তি রামচন্দ্রপুর বাজারে যান। মটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রধারীরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কোমরে পিস্তল ও হাতে হ্যন্ডকাপ ছিল। এ নিয়ে শৈলকুপা থানায় জিডি করতে গেলে থানা পুলিশ জিডি গ্রহন করেনি। বেগম ইদ্রিস জানান, তিনি তার স্বামীর জীবন নিয়ে শংকিত। কথিত ক্রসফায়ার সাজিয়ে যেন তাকে হত্যা করা না হয় সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবী করেন তিনি। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বামীকে জীবিত অবস্থায় ফেরতের দাবী জানিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়ে মাহফুজা খাতুন, আদুরী খাতুন, শেফা খাতুন, ছেলে ফরহাদ, নিখোঁজ পান্নার বাবা গোলাম কওছার আলী মন্ডল, ভাই আব্দুল মান্নান, ভগ্নিপতি মহিউদ্দীনসহ তার আত্ময় স্বজন ও গ্রামবাসিরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য ঝিনাইদহে সাদা পোশাকে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ঘটনা সাথে কারা জড়িত তা স্পষ্ট নয়। তবে অনেকে বাড়ি ফিরে আসছে। আবার কেও আদালতের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে জেল হাজতে। বাড়ি ফিরে আসারা ভয়ে মুখ খুলছে না। সর্বশেষ ব্যাপারীপাড়ার তেল ব্যবসায়ী শরিফুল গত রোববার বেলা ১টায় নিখোঁজ হন। সাদা পোশাকের লোকজন তাকে বাজারের মধ্যে থেকে তুলে নিয়ে যান বলে তার স্ত্রী বিথি খাতুন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে তিনি একাই বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে তিনি মুখে কুলুপ আঁটেন। র‌্যাবের সর্বশেষ নিখোঁজের তালিকা মোতাবেক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে জাহিদুল নামে একজন নিখোঁজের কথা বলা হয়েছে। তবে নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের স্বজনদের দেওয়া তথ্য মতে জেলা থেকে এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি। নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিরা হলেন, কোরাপাড়া বটতলার জাহিদ, হলিধানীর রোজ, ঝিনাইদহ উপশহরপাড়া মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা, হরিণাকুন্ডুর ইদ্রির আলী পান্না, সদর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের আনিচুর রহমান, কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া মসজিদের ইমাম আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চাপড়ী গ্রামের হাসান আলী, ঝিনাইদহ শহরে হামদহ এলাকার খোকন ও তার ভাতিজা। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করতে বলা হয়েছে। জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের স্বজনদের জিডি করতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশও তাদের সন্ধান করছে।



মন্তব্য চালু নেই