টক ও মিষ্টি খেলে কি কান পাকে?

কানের যত রকম রোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ক্ষতিকর হচ্ছে কানপাকা। কানপাকা রোগ মূলত দু’ধরনের হযে থাকে। এক. নিরাপদ ধরনের কানপাকা। দুই. মারাত্মক ধরনের কানপাকা।

নিরাপদ ধরনের কানপাকার চিকিৎসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধ দিয়ে করা সম্ভব। ওষুধে না সারলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার পড়ে। অন্যদিকে মারাত্মক ধরনের কানপাকার চিকিৎসায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই অপারেশনের দরকার পড়ে। এই কানপাকা রোগ নিয়ে সাধারণের মাঝে অনেক রকম ভুল ধারণা রয়েছে।

অনেকেরই ধারণা টক খেলে কান পাকে। সাধারণের এই ধারণা কিন্তু একবারেই অমূলক। টক জাতীয় খাবার অর্থাৎ তেঁতুল, আমলকি, জলপাই, কামরাঙা, বড়ই, কাঁচা আম, জাম্বুরা, লেবু ইত্যাদি ফল খাওয়ার সঙ্গে কানপাকার কোনো রকম সম্পর্কই নেই। বরং এ সব ফলে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’সহ নানা ধরনের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ শরীর গঠনে সাহায্য করে। এ ধরনের ঋতুভিত্তিক ফলগুলো যখনই পাওয়া যাবে তখনই খাওয়া উচিত। এগুলো যে খুবই উপকারী ফল তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ফল কখনও কোনো রোগ সৃষ্টি কিংবা রোগ নিরাময়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।বরং রোগ সারাতে সাহায্য করে।

অথচ অনেক কানপাকা রোগী ইচ্ছাকৃতভাবেই টকজাতীয় বিভিন্ন ফল গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন এ সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞানের অভাবে।

কানপাকা রোগের কারণ এবং রোগ দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে টক জাতীয় ফলের যোগসূত্রই নেই। একই ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে মিষ্টি সম্পর্কেও। কেউ কেউ মনে করেন মিষ্টি কিংবা মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার খেলে কানব্যথা হয়, কান পাকে তথা কানের ক্ষতি হয়। সাধারণের এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোথাও এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। তবে আমাদের দেশে দীর্ঘসময় ধরে টক সম্পর্কে নেতিবাচক অপপ্রচারের কারণে বংশপরম্পরায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকজনের মধ্যে এই ধারণা বেশ দৃঢ়ভাবে রয়েছে।দুঃখজনক হলে সত্যি, অনেক শিক্ষিত লোকজনও এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার প্রয়োজন মনে না করে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার উপরই র্নিদ্বিধায় আস্থা রাখেন।

কানপাকা রোগ হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কানপাকা রোগ দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে টনসিলের সমস্যা, নাকের হাড়বাঁকা, নাকের এ্যালার্জি, ঘনঘন সর্দি কাশি হওয়া, কানের যত্নের অভাবই প্রধানত দায়ী। অনেক কানপাকা রোগই সঠিকভাবে কানের যত্ন নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের পরও সেরে ওঠে না। কাজেই শেষ কথা হচ্ছে, কানের রোগ সেরে ওঠা না-ওঠা নির্ভর করে রোগের তীব্রতা ও ধরণ, পাশাপাশি অন্য রোগের উপস্থিতি এবং রোগের সঠিক চিকিৎসা ও উপদেশ মেনে চলার ওপর। তবে তা কখনওই টক জাতীয় ফল গ্রহণের ওপর নির্ভর করে না।

লেখক : ডা. সজল আশফাক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক



মন্তব্য চালু নেই