টলিউডের হেয়ারড্রেসারের আকস্মিক আত্মহত্যা

আত্মঘাতী হলেন টলিপাড়ার নামী হেয়ারড্রেসার দীপা মল্লিক। তাঁর বয়স ছিল ৩২। শনিবার দীপার কুঁদঘাটের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তবে কেন তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। মেলেনি কোনও সুইসাইড নোটও। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার সকালে মায়ের সঙ্গে একপ্রস্ত বাদানুবাদের পর দীপা বেলেঘাটার বাড়ি ছেড়ে কুঁদঘাটের ফ্ল্যাটে চলে আসেন। তার পরেই তিনি আত্মহত্যা করেন, এমনটাই অনুমান পুলিশের। এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

হেয়ারড্রেসার হিসেবে দীপা ছিলেন টলিউডে পরিচিত নাম। ‘অহল্যা’, ‘বলিউড ডায়েরিজ’, ‘কহানি টু’, ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’-সহ অনেক ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। টলিপাড়ার প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ টলিউড। মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদারের কথায়, ‘‘দীপাকে প্রায় আট-ন’বছর ধরে চিনি। ওকে ইন্ডাস্ট্রির ‘টপ’ হেয়ার ড্রেসার বললেও কম বলা হবে। ও ছিল তারও উপরে! দীপা আর নেই এটা ভাবতেও খারাপ লাগছে।’’

অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘ও যে এমন কিছু একটা করে বসবে, আমি একদমই আশঙ্কা করিনি। এই তো শেষ ‘কেলোর কীর্তি’ ছবিতে ওর সঙ্গে কাজ করলাম। বিরসাদা’র (দাশগুপ্ত) ছবির শ্যুটিংয়ে আজ (শনিবার) রাতেই বেরিয়ে যাচ্ছি। দীপারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ও ব্যস্ত বলে সেটা সম্ভব হয়নি। সকালে আমার সহকারীকে ফোন করে বলেছিল, ‘দিদি চলে যাচ্ছে, সবকিছু যেন ঠিক করে গুছিয়ে নেয়’। তারপর কী হল কে জানে!’’

টেকনিশিয়ান হিসেবে দীপা যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। মিমির কথায়, ‘‘আমার চুল খুব কম লোকেই ভাল করে স্টাইল করতে পারে। কিন্তু দীপাকে কখনও কিছু বলতে হয়নি। ও নিজেই বুঝে যেত, কী করতে হবে! আমার বেশিরভাগ ছবিতে ও-ই কাজ করত। ইট্‌স আ হিউজ লস ফর মি।’’ দীপা হঠাৎ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন কেন? মিমির উত্তর, ‘‘কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না। তবে কিছুদিন ধরে পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে দীপা খুব চিন্তায় ছিল।’’

অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তীও অনেকদিন চেনেন দীপাকে। তিনি খবরটা জানতেন না। বললেন, ‘‘আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না! ও ভীষণ কাছের ছিল আমার। ‘তিন পাত্তি’তে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক বিজ্ঞাপন, ইভেন্টেও আমাকে স্টাইল করে দিয়েছিল ও। এত ব্রাইট একটা মেয়ে! ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো সমস্যা ছিল কোনও…ঠিক জানিও না। ‘ক্ষত’তে একটা রোল করছি আমি। সেখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা লুক দিয়েছিল ও আমাকে। সে তো মোটে ক’দিন আগে…এর মধ্যেই কী যে হল!’’

পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সকালে দীপা কুঁদঘাটে নিজের ফ্ল্যাটে এসে তাঁর এক বন্ধুকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমার মরা মুখ দেখবি’। যদিও সেই বন্ধুর পরিচয় কী, সে প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। সেই বন্ধু দীপার ওখানে পৌঁছে দেখেন, ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। এরপর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দীপার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর দীপার দেহ বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে, তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান পূর্ত এবং ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নুসরত জাহান সহ টালিগঞ্জের অনেকেই। টুইট করে দীপার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেতা-সাংসদ দেবও।

দীপার আত্মহত্যা প্রসঙ্গে শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত (ডিজাইনার-স্টাইলিস্ট) বলছিলেন, ‘‘অহল্যা’, ‘ষড়রিপু’— অনেক ছবিতেই কাজ করেছি ওর সঙ্গে। ও এতটাই ভাল কাজ করত যে, কোনও কারণে একটা ছবির কাজ মাঝপথে ছেড়ে চলে গেলে, অন্য কেউ সেই মানের কাজ করতে পারত না। সমস্যায় পড়তে হতো। শি ওয়াজ ফ্যান্টাস্টিক। ইন্ডাস্ট্রিতে এই প্রজন্মের সেরা হেয়ারড্রেসারদের একজন ছিল দীপা। পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে একেকটা চেঞ্জ করে দিতে পারত। গত বছর স্বস্তিকার (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে একটা শ্যুট করেছিলাম ‘নেক্সটাইল্‌স’এর জন্য। দীপা সেটায় কাজ করেছিল। ও কিন্তু খুব গল্পগুজব করত। এমন নয় যে সারাক্ষণ ডিপ্রেস্‌ড থাকত। কাজ নিয়েও কোনও রকম সমস্যা ছিল না। প্রচুর কাজ পেত। কী এমন হলে মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, সেটা এখনও আমি বুঝতে পারছি না।’’



মন্তব্য চালু নেই