টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের চিন্তাভাবনা

সরকারি চাকরিজীবীদের অষ্টম টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালে সরকার বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক (প্রকৃচি) ও বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

জাতীয় বেতনস্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, উপজেলা পরিষদ সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা অফিস স্মারক সংশোধন এবং চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত তিন দাবি নিয়ে প্রকৃচি ও বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতারা সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। কমিটির প্রধান বাহাউদ্দিন নাসিমের নেতৃত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলান, প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর, কৃষিবিদ মোবারক আলী, মো. ফিরোজ খান প্রমুখ।

বৈঠকে সংগঠনের আহ্বায়ক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করলে সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে। ফলে উন্নয়নমূলক কর্মকা- থমকে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, কোন একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করতেই পে-স্কেল থেকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেওয়া হয়েছে। অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে এবিষয়টি সুবিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, সব দাবি মানা সম্ভব নয়। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি যাতে সহজে হয় সেজন্য সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৈঠকের শুরুতে সংগঠনটির নেতারা তিন দফা দাবি সংক্রান্ত দাবিনামা অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এতে তারা অভিযোগ করেন, ‘সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করায় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে পদ অবনমন হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ পদোন্নতির পদ হিসেবে ৪র্থ গ্রেডে অধ্যাপক পদ লাভ করেন। এর মধ্যে থেকে ৫০ভাগ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড হিসেবে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হন। সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করায় অধ্যাপকগণ ৩য় গ্রেডে উন্নীত হতে পারবেন না। ফলে ৪র্থ গ্রেড থেকেই তাদের অবসরে যেতে হবে। অথচ এ ক্যাডারের শীর্ষপদ ১ম গ্রেডের। ২০১৫ বেতনস্কেল অনুযায়ী শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাই আর শীর্ষ পদ লাভ করতে পারবেন না।

তাদের দাবি, ‘উপজেলা পরিষদ সংক্রান্ত অফিস স্মারক : সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা ‘উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণকে উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় ও নিয়ন্ত্রণে ন্যস্তকরণ এবং তাদের বেতনভাতাদি বাবদ সরকার প্রদেয় অর্থ পরিষদ তহবিলে স্থানান্তর’ শিরোনামে একটি অফিস স্মারক জারি করে। এ স্মারকের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত হওয়া একজন কর্মকর্তা সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা ও দফতরের ওপর কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে বছরান্তে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সুপারিশ করে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল প্রণয়ন এবং সুপারিশ করে ডক্টর ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় পে-কমিশন। পরে মন্ত্রিসভায়ও তা অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিলেকশন গ্রেড এবং টাইম স্কেল বাতিলের তীব্র প্রতিবাদ করে তা পুনর্বহালের দাবি তোলেন।

এই পরিস্থিতিতে জাতীয় উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালনকারী প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতারা আজ সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

জাতীয় পে-স্কেল মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ এ মাসেই হওয়ার কথা রয়েছে। যা কার্যকর ধরা হবে চলতি বছরের পহেলা জুলাই থেকে। এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলে বেতন তুলতে পারবেন আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে।



মন্তব্য চালু নেই