টাকার জন্যই অধিনায়কত্ব ছাড়লেন মুশফিক!

বলা নেই, কওয়া নেই- হঠাৎ দায়িত্ব ছাড়ার অভ্যাস তার পুরনো। সেটা শুধুই ঘরের ক্রিকেটে নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নেতৃত্ব ছাড়ার রেকর্ড আছে মুশফিকুর রহীমের। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজের মাঝামাঝি দল পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কি হইচই না ফেলে দিয়েছিলেন!

পরে দেশে ফিরে বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত বদলান তিনি এবং অকপটে স্বীকার করেন, অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত ছিল আবেগপ্রসূত এবং ভুল। তারপর আবার দায়িত্বে ফিরে আসা। ইতিহাস জানাচ্ছে, ঘরের ক্রিকেটেও একাধিকবার মুশফিক ঠিক অমন কাজ করেছেন। ২০১৩-২০১৪ প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামালের হয়ে ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ একদিন অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা। অথচ সেই লিগে তার ব্যাট থেকে রানের ফলগুধারা বয়ে যাচ্ছিল।

এক ম্যাচ হারে ক্লাব কর্তাদের বকুনি নাকি সহ্য হয়নি ইমোশনাল মুশফিকের। তাই আবেগতাড়িত হয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়া। এরপর বিপিএলেও একই কাজ করেছিলেন তিনি। আর সর্বশেষ অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘটনা ঘটালেন বুধবার। বিকেএসপিতে আবাহনীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দিন সকালে জানা গেল, মুশফিক এ ম্যাচে মোহামেডানের অধিনায়ক নন। নাইম ইসলাম অধিনায়ক।

অথচ আগের দিন শের-ই বাংলার একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেছেন ঠিকমত। সহযোগী ক্রিকেটার ও মিডিয়ার কেউ তখনো ঘুর্ণাক্ষরেও টের পাননি, পরদিন মুশফিক নেতৃত্বে থাকছেন না। তার বদলে অন্য কেউ সাদাকালো শিবিরকে নেতৃত্ব দেবেন; কিন্তু একজন জানতেন।

তিনি সোহেল ইসলাম; মোহামেডান কোচ। তাকে দুদিন আগেই অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন মুশফিক। বলেছিলেন, ‘সোহেল ভাই, রান পাচ্ছি না। মনে হয় ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিলে ফ্রি হয়ে খেলতে পারবো। রান খরা কাটবে। নাইম ভাই (নাইম ইসলাম) আছেন। সিনিয়র ও পরিণত ক্রিকেটার। তিনিই পারবেন নেতৃত্ব দিতে।’

কোচ সোহেল কথাটা তখন সেভাবে আমলে আনেননি। ভেবেছিলেন, এটা আবেগের কথা। মুশফিকের এমন প্রবণতা আছে। এ কারণেই মোহামেডান অফিশিয়ালদের কানে সে বার্তা পৌঁছাননি। এমনকি সমন্বয়কারী জিয়াউর রহমান তপুও জানতেন না মুশফিক আবাহনীর বিরুদ্ধে ক্যাপ্টেন্সি করবেন না। কোচ সোহেল নিশ্চিত হন খেলার আগের দিন বিকেলে প্র্যাকটিস শেষে। টিম মিটিংয়ে কোচের ব্রিফিংয়ের পর মুশফিককে কথা বলতে বলা হলে ‘নো কমেন্টস’ বলে দেন মুশফিক।

রাতে আর কাউকে কিছু জানাননি মোহামেডান কোচ। খেলার দিন সকালে নাঈম ইসলামের কাঁধে দল পরিচালনার গুরু দায়িত্ব বর্তায়। এভাবেই আবাহনীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুশফিকের বদলে অধিনায়ক হন নাঈম ইসলাম।

উপরের অংশটুকু পড়ে যে কেউ ভাবতে পারেন, মুশফিক বুঝি রানে ফেরার তাগিদেই অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন; কিন্তু তা কী করে হয়? পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে তার ব্যাট তো সচলই ছিল। বুধবার আবাহনীর সঙ্গে খেলার (২৬) আগে চার ম্যাচে দুটি ফিফটিও রয়েছে তার (৩৪+৬৬+৭৫+৪)।

তাহলে চাপমুক্তির প্রশ্ন কেন? জানতে ইচ্ছে করছে তাই না! তবে কি অন্য কোন কারণ আছে? কোচ, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মতপার্থক্য, দ্বন্দ্ব? ভিতরের খবর ভিন্ন। ক্লাবের পক্ষ থেকে পেমেন্ট নিয়ে যারপরনাই অসন্তুষ্ট মুশফিক। জানা গেছে, পাওনাটা সময় মত পাননি মুশফিক। সেই না পাওয়া থেকেই সৃষ্টি হয়েছে বড় রকমের অসন্তোষ।

এর আগে একবার বিপিএলে নিজের এবং সহযোগীদের পাওনা না পেয়ে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও এবার পারিশ্রমিক সময় মত না পেয়ে মুখ ফুটে মিডিয়ায় কিছু বলেননি মুশফিক। তার ও মোহামেডান সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, মূলত সময় মত পাওনা না পেয়েই ক্ষুব্ধ মুশফিক। তাই রাগে-ক্ষোভে আবাহনীর সঙ্গে ম্যাচের আগে সরে দাঁড়ানো তার।

এ ব্যপারে মুশফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন রিসিভ করেননি। শুধু মুঠোফোনেই নয়, কোন এক অজ্ঞাত কারণে এবার লিগের শুরু থেকেই তার মুখে তালা। সেঞ্চুরি করার পর এবং প্রথম লিগে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিরুদ্ধে বড় জয়ের পরও মুশফিক মিডিয়ার সামনে আসেননি। কথাও বলেননি। বুধবার হারের পরও না।

তবে কী সময় মত পাওনার কিস্তি না পেয়েই এমন ক্ষোভ তার? বলে রাখা ভালো, প্রথম কিস্তির ৩০ শতাংশ অর্থ ঠিক সময়ই পেয়েছেন মোহামেডানের সবাই। বাকি অংশ পাবার কথা ছিল লিগের মাঝামাঝি; কিন্তু প্রথম লিগ শেষে সুপার লিগের দুই ম্যাচ হয়ে গেছে। পেমেন্টের খবর নেই। মাঝে চেক দেয়া হলেও তা নাকি বাউন্স হয়েছে। এ সব কারণেই মন খারাপ মুশফিকের।-জাগো নিউজ



মন্তব্য চালু নেই