ট্যানারির গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্ধ করবে সরকার

হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলোর যেগুলো সাভারে নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তরে ব্যর্থ হবে তাদের গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেয়া হবে। শিল্পমন্ত্রীর দেয়া ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পরই এ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, স্থানান্তরে সময় না বাড়াতে অনড় সরকার।

হাজারীবাগ এলাকায় অন্যান্য দিনের মতো চলছে ট্যানারির কাজ। পুরো এলাকা শুকনো চামড়ার গন্ধ, পথচারীরা নাক চেপে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। কাজের ফাঁকে আড্ডায় মেতে উঠছে শ্রমিকরা। মন্ত্রীর আলটিমেটাম নিয়ে নেই কোনো আলোচনা শুনা গেল না। এমনকি অনেক কারখানায় নতুন মেশিন স্থাপন করতেও দেখা গেছে।

ঢাকা লেদারের কর্মরত রতন মিয়া জানান, প্রতিদিন শুকনো চামড়ার মধ্যে আমাদের কারখানায় পুরোদমে চলছে। কারখানা স্থানান্তরের বিষয়ে আমাদের মালিক কিছুই বলেনি। তবে শুনেছি সাভার কারখানা চলে যাবে।

এদিকে ট্যানারি স্থানান্তরে শিল্পমন্ত্রীর দেয়া ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামে অনড় থাকছে সরকার। পাশাপাশি মঙ্গলবার ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে উকিল নোটিশ পাঠানোর কথা ছিল। অবশ্য তা বুধবার পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান তরফদার।

সূত্র জানিয়েছে, বেঁধে দেয়া সময়ের পর যেসব ট্যানারি হাজারীবাগে থাকবে তাদের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্নসহ কারখানা সিলগালা করে দেয়া হবে। অবশ্য সময় বাড়ানোর চেষ্টা তদবির করছেন চামড়া শিল্প মালিকরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, মন্ত্রীর বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। আজ (মঙ্গলবার) শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, স্থানান্তরের সময় বাড়ানো জন্য দাবি করেছি আমরা।

সোমবার ট্যানারি স্থানান্তরে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। সে হিসেবে সময় শেষ হবে বুধবার দুপুর ২টায়। সময় বাড়ানোর জন্য মঙ্গলবার চামড়া শিল্প মালিক সংগঠনের নেতারা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেও মন্ত্রী তার নির্দেশনায় অটল রয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

এ সম্পর্কে লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু তাহের জানান, মন্ত্রীর আলটিমেটাম সবার জন্য নয়, মূলত যারা সাভারে প্লট বরাদ্দ পেয়েছে পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখনও স্থানান্তরের কাজ শুরু করেনি তাদের জন্যেই এই আলটিমেটাম। মন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে এখনও অনড় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান লুৎফর রহমান তরফদার বলেন, সাভারে স্থানান্তরের বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের সরকার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে। কিন্তু তারা সেইসব সুবিধা গ্রহণ করে টালবাহানা করছে। কারখানা স্থানান্তরে কালক্ষেপণ করছে। এখন মন্ত্রী যে সময় বেঁধে দিয়েছেন সে সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে। যারা ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আলটিমেটাম দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপির বর্জ্য পরিশোধন কাজ শুরু করতে হবে। যেসব ট্যানারি মালিক নির্মাণ কাজে বিলম্ব করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য সরকারের দেয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন, তাদের হাজারীবাগের কারখানার মালামাল ক্রোক করা হবে।

এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০০৯ সালে হাজারীবাগের চামড়া শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারে চামড়া শিল্প নগরী স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা অর্থিক সহযোগিতাও সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে ।

চামড়া শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের দিক থেকে ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তরের চাপ রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত শিল্পের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞারও আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তর জরুরি বলে মনে করছে সরকার।

চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইউম জানান, ১২১টি ট্যানারিকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ নিয়েও স্থানান্তরের কাজ শুরু করেনি ২৮টি ট্যানারি কারখানা।



মন্তব্য চালু নেই