ট্রাম্পের যৌন হয়রানির শিকার নারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে দুই প্রার্থীর ধুন্দমার তর্ক-বিতর্ক চলছে। গত বরিবার রাতের বিতর্ক আয়োজনে কো-মডারেটর অ্যান্ডারসন কুপার লেগেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে। তিনি একটি প্রশ্নের উত্তর বের করতেই চাইছিলেন ট্রাম্পের মুখ থেকে। তার প্রশ্নটা ছিল, ডোনাল্ড কি কখনো কোনো নারীর যৌনাঙ্গে হাত দিয়েছিলেন কিংবা কোনো নারীকে চুমু খেয়েছিলেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে?

অনেক চাপাচাপির পর অবশেষে ট্রাম্প বললেন, নারীরা আমাকে সম্মান করেন। না, আমি কখনো কোনো নারীর সঙ্গে এমন কিছু করিনি। পরে ট্রাম্প প্রসঙ্গকে তার সুবিধাজনক স্থানে নেওয়ার চেষ্ট করেন।

কিন্তু বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী সামনে চলে এসেছেন। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণে অভিযোগ করছেন। অনেকে মনে পুষে রেখেছেন প্রচণ্ড ক্ষোভ।

২০০১ সালের মিস টিন ইউএসএ জানান, তিনি তার ড্রেসিং রুমে পোশাক পরছিলেন। একেবারে নগ্ন অবস্থায় সেখানে ঢুকে পরেন ট্রাম্প। সেখানে আরো মেয়েরা নগ্ন অবস্থায় ছিলেন। ১৯৯৭ সালের আরেক সুন্দরী একই অভিযোগ করেছেন।

এমন আরো অনেক অভিযোগ আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এখানে ট্রাম্পের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন নারীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হলো।

১. তার নাম ক্যাথি হেলার। ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর তার অভিযোগ প্রকাশ পায়। তবে ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৭ সালে। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় বিশ বছর আগে এক মাদারস ডে’তে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ক্যাথি। তিনি টেবিলে টেবিলে গিয়ে সবাই হ্যালো বলছিলেন ক্যাথি। তিনি যখন ট্রাম্পের সামনে আসলেন যখন ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে চুমু খেতে চান। কিন্তু ক্যাথি রাজি না হওয়ার রীতিমতো রেগে যান তিনি। কিন্তু তাকে ছাড় দেননি ট্রাম্প। সেখানে উপস্থিত একজন জানিয়েছিলেন, একটা সময় ক্যাথি মুখে ট্রাম্পের মুখ দেখতে পান তিনি।

২. আরেকজন সামার জার্ভোস। তিনি অভিযোগ তোলেন ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। ঘটানা ঘটেছিল ২০০৭ সালে। জার্ভোস ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ এর ৫ম মৌসুমে আবির্ভুত হন। ওটা শুরু হয় ২০০৬ সালে। ২০০৭ সালে জার্ভোস তার চাকরির বিষয়ে দেখা করতে যান ট্রাম্পের সঙ্গে। দেখা হওয়ার সময় এবং আলোচনা শেষে দুবার ট্রাম্প তার ঠোঁটে চুমু খান বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। পরে সামারকে বাঙলোতে ডেকে পাঠান ট্রাম্প। সেখানে যাওয়ার পর সামারকে রীতিমতো সিক্ত চুম্বন করতে থাকেন ট্রাম্প। সামার বাধা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ট্রাম্প তার হাত রাখেন সামারের স্তনে। সামার জোর করে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রাম্প তার যৌনাঙ্গ দিয়ে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ট্রাম্প তার প্রতিষ্ঠানে অনেক কম বেতনে চাকরি দিতে চান সামারকে।

৩. অভিযোগ এনেছেন ক্রিস্টেন অ্যান্ডারসন। একই দিন তিনিও অভিযোগ তোলেন। তার ঘটনা নব্বুইয়ের দশকের। ওয়াশিং পোস্ট লিখেছে, ম্যানহাটানের বিভিন্ন স্থানে রাতে ডেটিং দিতেন তারা। মাঝে মধ্যেই ট্রাম্পের হাত তার মিনি স্কার্টের ভেতরে চলে যেতো। এ নিয়ে তেমন সমস্যা ছিল না ক্রিস্টেনের। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পর তার চিন্তা-ভাবনা বদলাতে থাকে। ট্রাম্প যখন বলে যে তিনি কখনো কোনো নারীকে স্পর্শ করেননি, তখন এগুলো না জানিয়ে পারছেন না তিনি।

৪. নাতাশা স্টোনিয়ফও তুলেছেন অভিযোগ। তিনি জানান দেন ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর। ঘটনা ঘটেছিল ২০০৫ সালে। ২০০৫ সালে নাতাশা যান ট্রাম্পের একটি সাক্ষাৎকার নিতে। তখন তার স্ত্রী মেলিনা গর্ভবতী ছিলেন। ট্রাম্প তাকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রাম্প নাতাশাকে ওয়ালে সঙ্গে চেপে ধর তার জিহ্বা নাতাশার মুখে ঢুকিয়ে দেন। এ ঘটনা ছাপিয়েও দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্মানহানীর ভয়ে আর করেননি।

৫. জেসিকা লিডস বললেন এ বছরের ১২ অক্টোবর। ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮০ এর দশকে। জানালেন, প্রায় ৩০ বছর আগেকার কথা। একটি ফ্লাইটে যাচ্ছিলেন লিডস। ট্রাম্পের পাশেই বসেছিলেন। সেখানে ট্রাম্প তার হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে চান জেসিকাকে। এত বছর এসব নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি।

৬. একই মুখ খুলেছেন র‌্যাচেল ক্রুকস। সেই ২০০৫ সালের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, তখন তার বয়স ২২ বছর। ট্রাম্প টাওয়ারে অবস্থিত একটি রিয়েল এস্টেট কম্পানিতে রিসেপশনিস্টের কাজ করেন তিনি। একদিন ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। হ্যান্ডশেক করার পর ট্রাম্প তার গালে চুমু খেতে শুরু করলেন। এরপরই সরাসরি ঠোঁটে চুমু দিলেন। পরে র‌্যাচেলের কাছ থেকে ফোন নম্বরও চান ট্রাম্প।

৭. মিন্ডি ম্যাকগিলিভারির ঘটনা ২০০৩ সালের। বললেন এ বছরের ১২ অক্টোবর। মার-আ-লোগোতে ১৩ বছর আগে ট্রাম্পের যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে তার কর্তৃপক্ষকে কখনো জানাননি। ওই দিন ট্রাম্প তার নিতম্ব চেপে ধরেছিলেন জানিয়েছিলেন ফটোগ্রাফার কেন ডেভিডোফকে।

৮. অভিযোগ তুলেছেন সিএনএন এর ইরিন বার্নেটের এক বান্ধবী। জানান দেন এ বছরের ৭ অক্টোবর। ইরিন জানান, তার ওই বান্ধবী একবার তাকে জানিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প তার মুখে চুমু খেয়েছিলেন।

৯. এ বছরের জুনের ১৭ তারিখে নিজের ঘটনার কথা জানালেন কাসান্দ্রা সিয়ার্লেস। তার ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে। তখন তিনি মিস ওয়াশিংটন ইউএসএ। ট্রাম্পের মালিকানাধীন মিস ইউএসএ পিজেন্টে প্রতিযোগিতা করছেন। মঞ্চে তাদের পরিচয়পর্ব বলে একটা ইভেন্ট হতো। সেখানে ট্রাম্পের চোখে চোখ রাখিনি বলে একই কাজ আবার করানো হয়। একটি পোস্টে এসব কথা তুলে ধরেন তিনি। সেখানে সব মেয়েকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে ট্রাম্প নিজেকে জাহির করতে চাইছিলেন।

১০. টেম্পল টেগার্ট তার ঘটনার কথা বললেন এ বছরের ১৪ মে তারিখে। ১৯৯৭ সালের কথা। একবার মিস উতাহ টেম্পলের সরাসরি ঠোঁটে চুমু খান ট্রাম্প। সেখানে আরো কয়েকটি মেয়ে ছিলেন। টেম্পলের ধারণা, তাদের সঙ্গেও একই কাজ করেছেন ট্রাম্প।

১১. এপ্রিলের ৪ তারিখে নিজের অভিজ্ঞতার বয়ান করলেন জিল হার্থ। ১৯৯৩ সালে ট্রাম্প তাকে যৌন হয়রানি করেন। তার অভিযোগ ১৯৯৭ সালে আদালতে ওঠে। জানান, তিনি ও তার সহকর্মী যখন ট্রাম্পের বিউটি কম্পিটিশনে কাজ করছিলেন, তখন ট্রাম্প তার ওপর চড়াও হন। রীতিমতো ধর্ষণের চেষ্টা করেন এই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। দেয়ালে চেপে ধরে শরীরের সব জায়গায় হাত চালিয়েছিলেন ট্রাম্প।

১২. ট্রাম্পের সাবেক স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প অভিযোগ তোলেন ১৯৯৩ সালে। ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৮৯ সালে। রাগী হয়ে উঠলে ট্রাম্প যে কতটা ভয়ংকর হন তারই কথা হ্যারি হার্ট তৃতীয় জানান তার ‘লস্ট টাইকুন: দ্য মেনি লাইভস অব ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প’ বইটিতে। সেখানে ইভানার কথা বলেন হ্যারি। ইভানা স্বামী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন।

সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



মন্তব্য চালু নেই