‘ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট নয়’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর রাজ্যে রাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।

বুধবার ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, শিকাগোসহ আরো কয়েকটি শহরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ গর্জে ওঠে। নির্বাচনী প্রচারে অভিবাসনবিরোধী, মুসলিম বিদ্বেষী অন্যান্য যেসব বিষয়ে ট্রাম্প বিতর্কিত নীতির কথা বলেছিলেন, সেসবের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ হয়েছে।

এদিকে, পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পরাজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। তারা স্বাগত জানালেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নেয়। তাদের প্লাকার্ডে লেখা ছিল ‘তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট নও’ এবং এ ধরনের আরো কিছু স্লোগান।

বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প টাওয়ার ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ কনক্রিট দিয়ে বাধা দেয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের এই কয়েক দিনে ট্রাম্প টাওয়ার ট্রাম্পের প্রধান কার্যলয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ছাড়া ম্যানহাটান পার্কে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। তারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেবেন না বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

বুধবার সন্ধ্যায় শিকাগোতেও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়। প্রায় ২ হাজার লোক এ বিক্ষোভ অংশ নেন। ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ও ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে উত্তাল বিক্ষোভ হয়। তারা স্লোগান দেন, ‘ট্রাম্প নয়’, ‘ফ্যাসিবাদী যুক্তরাষ্ট্র চাই না’ এবং ‘তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট নও’।

শিকাগোর বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২২ বছর বয়সি আড্রিয়ানা রিজো বলেন, ‘আমি সত্যিই আতঙ্কিত, কী হচ্ছে এ দেশে?’ তার হাতে একটি প্লাকার্ড ছিল, যাতে লেখা- ‘যখনই সুযোগ আসে, তোমার অধিকার উপভোগ কর।’

মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলার যে হুংকার দিয়েছেন ট্রাম্প, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় বুধবার। বিশেষ করে মেক্সিকানরা এ বিক্ষোভ চাঙ্গা করেছেন।

এ ছাড়া বুধবার আর যেসব স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, সিয়াটল, পোর্টল্যান্ড, অরেগন। বিক্ষোভের সংগঠকরা স্যান ফ্রান্সিস্কো, লস অ্যাঞ্জেলেস, ওকল্যান্ডে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।

টেক্সাস রাজ্যের রাজধানী অস্টিনে কয়েক শত মানুষ বুধবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের দাবি একই, তারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট মেনে নিতে রাজি নন।

বিক্ষোভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্পের প্রচারশিবির। তবে বুধবার বিজয় ভাষণে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি আমেরিকার সবার প্রেসিডেন্ট। সবাইকে নিয়ে দেশ পরিচালনার কথা বলেন তিনি।

ক্যালিফোর্নিয়ায় হয়েছে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দারা ট্রাম্পের জয় কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না। ট্রাম্পের শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন তারা। এ রাজ্যের বাসিন্দারা বিক্ষোভের সময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা হয়ে যাবে।

বুধবার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের স্যান ফ্রান্সিস্কোর বারকেলে হাইস্কুলের মাঠে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী-শিক্ষক বিক্ষোভ করেন। স্যান ফ্রান্সিস্কো উদার রাজনৈতিক চর্চার জন্য পরিচিত। বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়।

ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ হয়। শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ সব স্তর থেকে বিক্ষোভে অংশ নেয়। তারা স্লোগান দেয়, ‘জাতিভেদকে সমর্থন নয়, তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট নও।’

ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে নাটকীয়ভাবে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা বিতর্কে জর্জরিত ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত আমেরিকানদের ‘সর্বাধিনায়ক’ হয়েছেন।

কোনোভাবেই ট্রাম্প যেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে না পারেন, সেজন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উঠেপড়ে লেগেছিলেন। হিলারির অনেক সমাবেশে ওবামাকে দেখা গেছে। ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে হিলারির পক্ষে ভোট চেয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই ট্রাম্পই হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা। ট্রাম্পের হাতে হোয়াইট হাউসের চাবি দিয়ে বিদায় নিতে হবে ওবামাকে।

নির্বাচনী প্রচারে ওবামা যতই ট্রাম্পের নিন্দা করুন না কেন, এখন মঙ্গলবারের নির্বাচনের এই ফলাফল মেনে নিতে সব মার্কিনির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ওবামার ভাষ্য, ট্রাম্পের সফলতায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব এবং একসঙ্গে দেশ চালাব।



মন্তব্য চালু নেই