ঠিক কোন বয়সে বাঙালি মেয়েরা প্রেমে পড়ে?

প্রেম পড়ার কোনও নির্ধারিত বয়স নেই। কেউ বলতে পারেন না কে কবে কার প্রেমে পড়বেন। প্রেম বাল্যেও আসতে পারে, বার্ধক্যেও। তবে, সব কিছুরই একটা গড় হিসেব থাকে। প্রেমে পড়ার গড় বয়স অনেকটাই নির্ভর করে সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতের উপরে। মার্কিন সমাজে যে বয়সে একজন প্রেমে পড়ে, ভারতে তেমনটা না-ও হত পারে। একই কথা প্রযোজ্য পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে। পুরুষ যে বয়সে প্রেমে পড়ে, মেয়েরা তার অনেক আগেই পড়ে যান। এখানে বায়োলজি একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সব হিসেব-নিকেশের খোসা ছাড়িয়ে যদি দেখা যায়, বাঙালি মেয়েদের প্রেমে পড়ার কয়েকটা বেসিক বয়স-পয়েন্ট রয়েছে। দেখা যাক সেই বিন্দুগুলিকে।

• বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শরৎচন্দ্র— সেকালের বাংলা ঔপন্যাসিকরা তাঁদের লেখায় যেসব নায়িকা আমদানি করতেন, তাদের বয়স ১৩-১৫/১৬। কিন্তু, তাদের হাবভাব, কথাবার্তা আজকের ৩৫ বছরের মেয়েদের হার মানায়। না, সে সব গপ্পো বানানো নয়। বাঙালি পরিবারের গঠন আর সামাজিক সংস্থান তাদের সেই রকম ভাবেই তৈরি করত। আজ আর সেটা সম্ভব নয়।

• ইদানীংকালে প্রাক-বয়ঃসন্ধি পর্বেই প্রেম-সংক্রান্ত ধারণা বাঙালি মেয়েদের মধ্যে গড়ে ওঠে। কিছুটা বয়সে বড় মেয়েদের সঙ্গ করে, বাকিটা টিভি-সিনেমা মারফত। তাই ১২ থেকে ১৩ বছর বয়স খুবই সংবেদনশীল।

• স্কুলজীবনে যে বাঙালি মেয়েরা ‘প্রেম’-এ পড়েছে বলে মলে করে, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্লার্ট-এর বেশি কিছু নয়। পরে কলেজ জীবনে সেই সম্পর্কগুলো হাওয়া হয়ে যায়।

• কলেজি প্রেমের অভিমুখ প্রায়শই বদলায়। আবার কলেজের চরিত্র অনুযায়ী প্রেম নির্ধারিত হয়। পুরুলিয়া কলেজের বাংলা অনার্সের মেয়েটি যে কিসিমে প্রেমে পড়বে, যাদবপুরের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেই কিসিমে পড়বে না। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়েদের প্রেমে পড়ার প্রাইম টাইম।

• কর্মজীবনে প্রেমের বাতিক কমবেই। বেশিরভাগ মেয়েই ততদিনে এনগেজড। ছিটেফোঁটা যা পড়ে রয়েছে, তারা ডাইরেক্ট বিয়ের পিঁড়িকেই স্বপ্নে দেখে।

• সম্বন্ধ বিয়ের পরে একটা কন্ডিশনড লাভ তৈরি হয় বটে। কিন্তু সেখানে সেটা করা ছাড়া উপায় কোথায়? অপশন তো নেই!

• পোস্ট ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার চিরকালই ছিল, আজও অমলিন। কিন্তু সেখানে কতটা প্রেম, কতটা ইনুয়েন্দো, জানা দুরূহ।

• বিবাহোত্তীর্ণ প্রেমে বাঙালি মেয়েরা খুবই সাহসী। সেই কোন কালে জগদীশ গুপ্র লিখেছিলেন ‘বিধবা রতিমঞ্জরী’-র মতো গল্প। যেখানে জনৈকা বিধবা মহিলা নিজেই কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন নিজের বিবাহের জন্য। তেমনটা আজ হয়তো হয়, সেকালে হত কি? জগদীশবাবু তো শূন্য থেকে গল্পটা নামাননি! পরিণত মন ও বয়সেও প্রেম আসে। তার রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ একেবারেই আলাদা।

• পরশুরামের ‘যশোমতী’ গল্পটি মনে রাখুন। বার্ধক্যেও বাঙালি মেয়েরা প্রেম থেকে দূরে থাকেন না। পুরনো প্রেম চাগাড় দিতে পারে ষাটোর্ধ্বে। আবার নতুন করে দেখা দিতেও পারে প্রেম নামক প্রহেলিকা।



মন্তব্য চালু নেই