ডিএমপি হলো আ.লীগের শাখা অফিস

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শাখা অফিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।

রোববার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৮ নভেম্বর হোসরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ায় ঢাকা মহানগরীসহ সকল মহানগরের থানা সমূহে ও জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকাসহ সারাদেশের বিক্ষোভ কর্মসূচির চিত্র তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে রিজভী বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিজানকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছে।’

রিজভী বলেন, ‘আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে আবারো উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ এবং নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে জখম করে। মিছিল থেকে অগণিত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’

তিনি বলেন, ‘অবৈধ সরকারের মদদে পুলিশের এই ভূমিকা নতুন কিছু নয়, তারা যে এই অবৈধ ক্ষমতাসীনদেরই লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করছে এটা আজ সর্বজনবিদিত। সরকার গণতন্ত্রের বদলে পুলিশতন্ত্রকে তাদের সরকারি নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই সংবিধান স্বীকৃত বিরোধী দলের যেসমস্ত অধিকার অর্থাৎ সভা, সমাবেশ, মিছিল দেখলেই তারা তাদের বন্দুকের নল তাক করে চাঁদমারি করে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের পুলিশ বাহিনী নিজেদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির তোয়াক্কা করে না, রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে নিজেদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতার তোয়াক্কা করে না, বিধিবদ্ধ আইনে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের তোয়াক্কার করে না, সমাজে বিরাজমান ভয়াবহ খুন, জখম, অনাচার প্রতিকারে তারা তাদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয় না।’

বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘দখলদার, টেন্ডারবাজ, লুটেরা এবং রক্তপিপাসু সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের বিভৎস প্রতিযোগিতায় দিবারাত্রি আতংক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন রাত্রি যাপন করছে এদেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু এদেশের পুলিশ বাহিনী এই অবৈধ সরকারের মনতুষ্টির জন্য ন্যায় ও বিবেকবর্জিত অপকর্ম করতেই ব্যস্ত রয়েছে। বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ করতে না দেয়া এবং এর প্রতিবাদে আজকে দেশব্যাপী বিএনপি’র কর্মসূচির ওপর পুলিশের নারকীয় আক্রমণ দেশের মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের ওপর আরেকটি নির্মম আঘাত। এই ভোটারবিহীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদের কারণে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আদলে পুলিশের বেপরোয়া অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেশের জননিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মুখে।’

পুলিশের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ এতোটাই বেপরোয়া এবং মাত্রার বাইরে চলে গেছে যে, তারা এখন নির্দ্বিধায় এখতিয়ার বহির্ভূত কথা বলছে ও কাজ করছে। পুলিশ সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে পারে বলে মন্ত্রব্য করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এছাড়াও ড. মিজানের বক্তব্যকে অত্যন্ত তির্যকভাবে কটাক্ষ করেছে ডিএমপি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে-সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে ডিএমপি এহেন শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করতে পারে কি না। আমরা ড. মিজানের বক্তব্যের সাথে একমত যে, এই অবৈধ সরকারের সাজানো পুলিশ এতোবেশী আওয়ামী আদর্শিক চেতনায় উজ্জীবিত যে, তারা রাষ্ট্রের একটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংগঠন হিসেবে তাদের যে নিরপেক্ষ দায়িত্ব সেটি ভুলে গিয়ে এদেশের নাগরিকদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করতে চাচ্ছে। এদেরকে এতবেশী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। তাদের সীমানা এবং এখতিয়ারকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদেরকেও তিক্ত বাক্যবাণে আক্রমণ করতে দ্বিধা করছে না।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের এই আচরণে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থা কি রকম হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায়। পুলিশের বেপরোয়া গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তারের পর একের পর এক মামলা দায়ের, পুলিশী রিমান্ডে বিভৎস নির্যাতন, জামিন না দিতে আদালতের ওপর চাপ প্রয়োগ ইত্যাদি সার্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জীবন ও নিরাপত্তা কী ভয়াবহ হুমকির মুখে তা সবাই উপলব্ধি করতে পারেন। তাদের আচরণেই মনে হয় ডিএমপি শাসক দলের একটি শাখা অফিস। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যে নিরপেক্ষতা সেটি ডিএমপি’র কর্মকর্তারা মাটিচাপা দিয়ে আওয়ামী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে পুলিশী আক্রমণের ঘটনায় আমি দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া দেশব্যাপী পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’



মন্তব্য চালু নেই