ডিভোর্স নিচ্ছেন? সহজ করে তুলুন আপনার সন্তানকে

একজন মানুষের জীবন ও তার সাথে জড়িত সব সিদ্ধান্ত কেবল সেই মানুষটিকেই নয়, প্রভাবিত করে অন্যদেরকেও। আর সেই অন্য একজনটি যদি হয় নিজের ছোট্ট সন্তানটি তাহলে যেকোন বড় রকমের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হাজারবার সেটি সন্তানের ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা ভাবেন প্রতিটা বাবা-মা। অনেক সময় সন্তানের ভালোর কথা ভেবেই অনেক বিষয়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেন তারা। বিশেষ করে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হলেও কেবল সন্তানের জন্যে একসাথে এক ছাদের তলায় মৃত্যুর আগ অব্দি প্রচন্ড মানসিক পীড়া সহ্য করে হলেও বাস করেছেন এমন উদাহরন কম নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে মানাতে না পেরে অনেকেই পা বাড়ান বিচ্ছেদের দিকে। সত্যিই তো, যে সন্তানের কথা ভেবে হয়তো মানিয়ে নিচ্ছেন আপনি নিজেকে আপনার এই কুৎসিত জীবনটার সাথে, কে জানে ভবিষ্যতে হয়তো সেটাই আপনার সন্তানের ওপর আরো বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে! তাই এসব সাত-পাঁচ ভেবে অনেকেই করে ফেলছেন ডিভোর্স।

কিন্তু বিচ্ছেদ হওয়া দম্পতির সন্তান? সে কীভাবে মানিয়ে নেবে নিজেকে এই পরিস্থিতির সাথে? একা একা পারবে তো? না! পারবে না। আপনি যদি হন এমনই এক ডিভোর্সি অভিভাবক, তাহলে জেনে রাখুন যে, একা আপনার ছোট্ট সন্তানটির পক্ষে এত বড় মানসিক চাপ সহজে নেওয়া সম্ভব নয়। আর তাই তাকে সহজ করে তুলতে আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাকে সাহায্য করতে হবে। চলুন জেনে আসি কীভাবে।

১. তাকে কতটা ভালোবাসেন সেটা বোঝান

অনেক সময় বাবা-মায়ের আলাদা হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ ছোট্ট শিশুর মাথায় ঢোকেনা। ফলে সে নিজের মতন করে কারণ বানিয়ে নেয়। আর সেই কারণে সে নিজেকে দেখে নেতিবাচক কেউ হিসেবে। যার কারণে বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়েছে। সে ভাবে যে, সে আরো একটু ভালোভাবে থাকলে হয়তো এমনটা হত না। সবকিছুর মূল হোতা নিজেকে ভাবায় সবার কাছ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। তাই এসময় সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত খেয়াল রাখুন। তাকে বোঝান যে আপনারা দুজনেই তাকে কতটা ভালোবাসেন।

২. বিচ্ছেদের কারণ খোলাসা করুন

আপনার বাচ্চার কাছ থেকে এখন হয়তো আপনি আপনাদের বিচ্ছেদের সঠিক কারণটি লুকোচ্ছেন। কিন্তু কেমন হবে বলুন তো, যখন অন্য কারো কাছ থেকে উস্কানিমূলক কথা শুনবে সে আর সত্যি-মিথ্যা হাজারটা কথা লোকে শোনাবে তাকে? তাই সন্তানকে নিজেদের বিচ্ছেদের কারণটা খুলে বলুন যতটা সম্ভব। আর সেটা অবশ্যই বয়স অনুযায়ী সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করুন। তবে মাথায় রাখবেন যাতে করে আপনার কথায় আপনার শিশুটির এমন মনে না হয় যে আপনারা তার জন্যেই বিচ্ছেদের দিকে এগিয়েছেন।

৩. তাকে প্রকাশ করতে উৎসাহিত করুন

আপনার শিশুটির মনে অবশ্যই আপনাদের বিচ্ছেদকে নিয়ে হাজারটা অনুভূতি, আবেগ, কথা ঘোরাফেরা করছে। নিজের জীবনকে নিয়ে হয়তো হতাশ হয়ে পড়ছে সে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার প্রতিদিনের জীবন। এটা ঠিক যে এই সময়টায় আপনিও মানসিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকবেননা। তবে তবুও একটু সময় বের করুন আর আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন। নিজেকে মেলে ধরুন। এতে করে আপনার সন্তানও তার কষ্টগুলো আপনাকে বলবে। আর যা কিছুই হয়ে যাক না কেন খেয়াল রাখুন যেন আপনার সন্তানের দৈনন্দিন কর্ম তালিকা ঠিক থাকে।

৪. সন্তানের সামনে ঝগড়া থেকে বিরত থাকুন

যতটা তিতকুটে সম্পর্কই হোকনা কেন আপনাদের ভেতরে, সন্তানের সামনে একে অন্যের সাথে ঝগড়া করা বন্ধ করুন। একে অন্যকে দোষী করতেই পারেন আপনারা। কিন্তু সেটা ঐ ছোট্ট শিশুটির সামনে নয়। এটা ভাববেন না যে অন্য পক্ষের নামে আপনার সন্তানকে নেতিবাচক কথা বললে তার কষ্ট হয়না। আপনাদের নয়, বরং শিশুটির ওপরেই এক্ষেত্রে মানসিক চাপ বেশি করে চাপিয়ে দেন বাবা-মা নিজেদের এমন ব্যবহারের মাধ্যমে। তাই নিজেদের সম্পর্ককে শিশুর সামনে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরুন।



মন্তব্য চালু নেই