ডিমলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই উত্তোলণকৃত কোটি টাকা নিজস্ব একাউন্টে জমা

ডিমলা করেসপন্ডেট, নীলফামারী : নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ’র বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই উত্তোলনকৃত প্রায় কোটি টাকা তার নিজস্ব একাউন্টে জমা করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষন (টিআর-নগদ অথর্),কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচীর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নিজস্বার্থ চরিতার্থে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রায় কোটি টাকার প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন না করেই গেল ৩০ জুন এর মধ্যে উক্ত টাকা তড়িঘড়ি করে উত্তোলন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক সূত্রটি জানায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ উপজেলায় প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তদারকি ও প্রকল্প বাস্তব্য়ান নিশ্চিত করনের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তিনি এবারে ২০১৫-১৬ অর্থ বছেরর দ্বিতীয় ফেজে প্রায় অর্ধ-শতাধিক প্রকল্পের সমুদয় অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই প্রায় কোটি টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তিনি এসব টাকা গেল জুন/১৬ ক্লোজিং-এ উত্তোলন করে একটি নতুন একাউন্ট খুলে উক্ত টাকা রেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নির্ভরযোগ্য সূত্রটি।

ঘটনার অন্তরালে ঢুকে জানা যায়, এবারে সাধারণ বরাদ্দ ও বিশেষ বরাদ্দ মিলে প্রায় অর্ধ-শতাধিক এসব প্রকল্প গত ৩০ জুনের পূর্বে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সূত্রে প্রকাশ,সাধারণ প্রায় ৪৪টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫৬ লাখ ও বিশেষ বরাদ্দে ১৫টি প্রকল্প জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকাসহ প্রায় কোটি টাকা উপজলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাস্তবায়ন না করেই উত্তোলন করেছেন।

তিনি কিছু কিছুৃ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০টি ইউপি’র কাছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির ফরম জমা নিলেও অধিকাংশ প্রকল্প তিনি নিজেই তৈরী করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান/সভাপতিদের স্বাক্ষর জ্বাল করে তা নিজেই সার্টিফাই করে তড়িঘড়ি করে এসব ভূঁয়া প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিজ দায়িত্বে রাখেন যা নিয়ম বর্হিভূত। এবারে খাদ্যসষ্য (ধান,চাল,ভুট্টা) বিক্রয় করে টাকায় রুপান্তরিত করে এসব প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কোথাও কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের চিত্র চোখে পড়েনি। উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম আলীর সভাপতিত্বে ইউপিতে সোলার প্যানেল ও দক্ষিন খড়িবাড়ী পন্ডিতপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইউড্রেন ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পটিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গত ১৭ জুলাই পর্যন্ত কোন সোলার প্যানেল কিংবা বিদ্যালয়টির ইউড্রেন করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ঐ প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আলী জানায়,শুনেছি পিআইও প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন কিন্তু আমরা এখনও পাইনি। তিনি আরো বলেন, আমি বিদ্যালয়টির ইউড্রেন প্রকল্প জমা দিলেও পিআইও অতি উৎসাহি হয়ে ইউড্রেন কেটে দিয়ে তিনি সেটিকে সোলার প্যানেল করেছেন। তবে তিনি বলেন, যাই করুক না কেন তিনি কোন প্রকল্পের টাকা কিংবা সোলার কিছুই দেননি। একই অবস্থা উক্ত ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের হাজিপাড়া মাদ্রাসায় ৯০ হাজার টাকার প্রকল্পটিতে পায়নি সোলার প্যানেল।

তবে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামকে ডেকে পিআইও মাত্র ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করেন বলে জানান ঐ প্রকল্পের চেয়ারম্যান। উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নটি ঘুরে শুনা গেল একই কাহিনী। সেখানেও নতুনবাড়ী ঈদগা ময়দান সংস্কার, খগাখড়িবাড়ী দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংস্কার ও বড়বাড়ী দুইটি বড় মসজিদে প্রায় ৪ লাখ টাকার প্রকল্পের বিপরীতে টাকা উত্তোলন করা হলেও এসব প্রকল্পে কোন টাকা কিংবা সোলার প্যানেল পায়নি তারা।

৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও একটি প্রকল্পের চেয়্রাম্যান আবু কালাম বলেন, আমরা ৩০ জুনের মধ্যে কোন টাকা পায়নি। সে কারনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শুনেছি এবারের প্রকল্পগুলি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেগুলি ল্যাপস হয়ে গেছে। কিন্তু পিআইও টাকা তুলে রেখেছেন এরকম শুনেছি। জানা যায়, প্রতিটি প্রকল্পের সংশি¬ষ্ট সভাপতি/চেয়ারম্যান অনুকুলে ক্রোস চেক অথবা ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে সরাসরি ক্যাশ-পে সংশি¬ষ্ট সভাপতি/চেয়ারম্যান অনুকুলে দেয়ার নিয়ম থাকলেও এবারে পিআইও তা না করে তিনি নিজেই সকল প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উত্তোলন করে নিজস্ব একাউন্টে জমা করেন।

এ ব্যাপারে সোনালাী ব্যাংক, ডিমলা শাখার ব্যবস্থাপক সাদেকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পগুলির সভাপতি/চেয়াম্যানদের নামে ক্যাশ-পে দেওয়ার জন্য পিআইও অফিস থেকে লিখিত এ্যাডভাইস পেয়ে এবং প্রতিটি প্রকল্পের সভাপতি/চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষরের পাশে পিআইও’র সত্যায়িত থাকায় আমরা উক্ত টাকা ক্যাশ-পে করি। টাকাগুলি পিআইও’র অন্য একটি একাউন্টে রাখা হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এ ক্ষেত্রে পিআইও নিজেই সকল প্রকল্পের চেয়ারম্যান/ সভাপতিদের নাম সহি করে এবং নিজেই তা সত্যায়িত করেন। আর এসব জ্বাল সহি স্বাক্ষর করে পিআইও ট্রেজারী পাশ করে ব্যাংক থেকে ক্যাশ-পে নিয়ে তা নিজের একাউন্টে জমা করেন।

বেশ কিছু প্রকল্পের চেযারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চলতি মাসে কিছু প্রকল্প চেযারম্যানকে মোবাইলে ডেকে এনে ৩০-৪৫% কমিশন কেটে টাকা দিচ্ছে পিআইও ম্যাডাম। তবে যেহেতু প্রত্যেকটি প্রকল্পে ৫০% সোলার প্যানেল রয়েছে সে ক্ষেত্রে তিনি সোলারের জন্য ৫০% টাকা নিজের কাছে রেখে তার নিজস্ব একটি রেজিষ্টারে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা দিচ্ছেন। সোলার প্যানেল কবে দেয়া হবে তা জানা যায়নি। যা সরকারের কোন নীতিমালায় নেই।

প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে সরাসরি কথা হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ’র সাথে তিনি বলেন, আমি যা করছি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী। নিয়মের বাইরে কিছু করা হচ্ছে না।

তবে তিনি টাকাগুলি উত্তোলন করে নিজস্ব একাউন্টে রাখার বিষয়ে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইও’র যৌথ একাউন্টে এসব প্রকল্পের টাকা জমা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী সোলার প্যানেল সরবরাহকারী নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ইটকল কোম্পানীর কাছ থেকে সোলার নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

কিন্তু কোম্পনীটি যে সোলার প্যানেল ২৫/৩০ হাজার টাকা মূল্যে নির্ধারণ করেছেন সেই সোলার প্যানেল অন্য কোম্পানীর কাছে মাত্র ১০/১২ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। তাই নীতিমালা শিথিল করে এবারে অন্যত্র সোলার প্যানেল ক্রয়ের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এবারে যা করা হয়েছে সবার ভালো জন্য এবং নিয়ম মেনেই হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই