ডিসিদের স্বপরিবারে কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামূলক

দেশের সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) স্বপরিবারে কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। পাশাপাশি ডিসিদের সন্তানেরা যাতে তাদের পিতার কর্মস্থলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায় সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এছাড়া ওই কর্মকর্তার স্বামী বা স্ত্রী সরকারি চাকরিজীবী হলে তিনি ওই জেলায় বা পাশের জেলায় বদলির সুবিধা পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা সর্বশেষ পরিপত্রে একথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, সন্তানদের লেখাপড়া, আবাসন সুবিধা ও স্ত্রী বা স্বামীর চাকরির কারণে অনেক জেলা প্রশাসক স্বপরিবারে কর্মস্থলে অবস্থান করছেন না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিসিরা বিভিন্ন জেলায় কাজ করলেও তাদের পরিবার থাকে ঢাকায়। তাই সার্বক্ষণিকভাবে কর্মস্থলে থেকে তাদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হয় না। এসব সমস্যার জন্য অনেকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ পেতেও আগ্রহী হন না। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগসহ ডিসিদের স্বপরিবারে কর্মস্থলে রাখতে এ পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘কর্মস্থলে জেলা প্রশাসকদের স্বপরিবারে থাকার কথা বলা হলেও এবারই দালিলিকভাবে পরিপত্র জারির মাধ্যমে বিষয়টি আবশ্যক করা হয়েছে। আমরা দেখেছি কর্মস্থলে স্বপরিবারে না থাকলে দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের কর্মস্থলে সপরিবারে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেন। এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগও নিতে বলেছেন। ‘

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ডিসিদের স্ত্রী বা স্বামী সরকারি চাকরিজীবী হলে কর্মস্থলের কাছাকাছি বদলির বিষয়টি সরকারিভাবে আবারো বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিসি পদ থেকে ফিরে এলে সন্তানদের লেখাপড়া জন্য আগের স্কুলে ভর্তি করার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে শিক্ষাসচিব ও আবাসন সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিতে গণপূর্ত সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

মাকছুদুর রহমান বলেন, এখন থেকে কোন কোন ডিসি কর্মস্থলে পরিবার নিয়ে থাকেন কারা থাকেন না তা তদারকি করা হবে। আগামীতে ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিকভাবে কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা বিশেষ করে জেলা প্রশাসকদের স্বপরিবারে কর্মস্থলে অবস্থানের আবশ্যকতা রয়েছে।

প্রত্যেক জেলা প্রশাসক স্বপরিবারে কর্মস্থলে অবস্থান করবেন জানিয়ে পরিপত্রে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের স্ত্রী বা স্বামী সরকারি চাকরিজীবী হলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকদের স্ত্রী বা স্বামীকে জেলা প্রশাসকের কর্মস্থলে কিংবা পাশ্ববর্তী জেলায় পদায়ন/বদলি করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদফতর/সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী কোনো জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে ফিরে এলে তাদের সন্তানেরা মহানগরের স্কুলে ভর্তি হতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের পদ থেকে ঢাকায় আবার বদলি হয়ে আসা কর্মকর্তার সরকারি বাসা বরাদ্দের বিষয়টি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।

জেলা প্রশাসকের পদ থেকে বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের সন্তানদের আগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ৬ মার্চ শিক্ষা সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

একই তারিখে সরকারি চাকরিজীবী স্বামী বা স্ত্রীর একই বা কাছাকাছি স্থানে পদায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবের কাছেও চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

দেশে বর্তমানে ৬৪টি জেলায় একজন করে ডিসি রয়েছেন। জেলার সর্বেসর্বা হচ্ছেন ডিসি। প্রশাসনের উপসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসক হয়ে থাকেন।

প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন তার স্ত্রী মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা অফিসার তিনি এখনো কর্মস্থলে নিয়ে যাননি। এছাড়া অনেক জেলা প্রশাসকের স্ত্রী ও সন্তান রাজধানী ঢাকায় রয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই