ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিদের তালিকা তৈরি করছে ডিএমপি

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের তালিকা তৈরি করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। বিদেশিরা কোথায় থাকেন, কোথায় যাতায়াত করেন, কোথায় চাকরি করেন—এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বুধবার ডিএমপির ৮ ক্রাইম জোনের উপ-কমিশনারসহ ৪৯ থানার ওসিকে এসব তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার এই ক্রাইম কনফারেন্সে ডিএমপির সব ইউনিটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বিদেশি নাগরিকরা কোথায় থাকেন এবং কোথায় যাতায়াত করেন, সে বিষয়গুলো আমাদের নলেজে থাকলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুবিধা হবে। এ কারণেই বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান-২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই রংপুরের আলুটারি এলাকায় জাপানি নাগরিক ওসি কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকরী নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিককের মৃত্যুর পর বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের অধিকাংশই বসবাস করেন রাজধানী ঢাকায়। বিশেষ করে ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারায় বিদেশিদের বসবাস ও কর্মস্থল রয়েছে। এর বাইরে রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বা সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাসও করেন। তারা কে কোথায় থাকেন বা কাজ করেন—তা জানতে পারলে পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুবিধা হয়।

কঠোর নজরদারির নির্দেশনা

রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিকাপাড়াসহ প্রত্যেক এলাকায় কঠোর নজরদারির নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। একইসঙ্গে প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লায় ব্লক-রেইড, চেকপোস্ট, ফুট পেট্রোল, ভেহিক্যাল পেট্রোলসহ দৃশ্যমান পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশনা দেন তিনি। তবে ডিএমপি কমিশনার মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের হুঁশিয়ারি করে দেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার বা তল্লাশি অভিযানে সাধারণ নাগরিক কেউ যেন ‘হ্যারেসমেন্ট’ না হয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা

পুলিশের ইউনিফর্মের ডিজাইনের মতো করে কোনও সিকিউরিটি সংস্থা ইউনিফর্ম তৈরি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

পুলিশ সূত্র জানায়, অনেক সিকিউরিটি সংস্থা পুলিশের ইউনিফর্মের মতো করে পোশাক বানিয়ে ব্যবহার করছে। এদের কেউ কেউ নিজেদের ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ও দিয়ে থাকে। পুলিশ কমিশনার ৪৯ থানার ওসিদের এ রকম কোনও ঘটনা পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

শ্রেষ্ঠদের পুরস্কার দিলেন কমিশনার

মাসিক অপরাধ সভায় জুলাই মাসে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাজের দক্ষতা ও সাফল্যের কারণে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের পুরস্কার দেন কমিশনার। জুলাই মাসের শ্রেষ্ঠ পুলিশ বিভাগ হয়েছে ওয়ারী বিভাগ। চোরাই গাড়ি উদ্ধার, অস্ত্র উদ্ধার, মামলার তদন্ত, জঙ্গি গ্রেফতার বিষয়ে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের একাধিক সহকারী পুলিশ কমিশনারও পুরস্কার পান। ট্রাফিকে শ্রেষ্ঠ বিভাগ হয়েছে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ, বিট পুলিশিংয়ে মতিঝিল বিভাগ পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া বিশেষ ক্যাটাগরিতে ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান, গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমদেসহ বেশ কয়েকজন পুরস্কৃত হয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই