ঢাবির ছাত্রী লজ্জা-অপমানে হাসপাতালে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে রয়েছে, কি হয়েছিল সেদিন?

ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রীকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে মানিকগঞ্জে। ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী মানিকগঞ্জের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া আলোচিত এই ঘটনার নায়ক আশিকুর রহমান সবুজের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন বিভিন্ন মহল।

সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী লজ্জা-অপমানে বেডের এক কোণে সারা শরীরে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে রয়েছেন। চোখে মুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ। কারও সঙ্গে কথা বলছে না। কেউ কিছু জিজ্ঞাস করলে উত্তরও দিচ্ছেন না। ধর্ষণের পাশাপাশি শরীরে শারীরিক নির্যাতনের বিভিন্ন ক্ষত তাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। একপর্যায়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে সে শুধু বলছে আমার জীবনটা যে নষ্ট করে দিয়েছে, আমি তার ফাঁসি চাই। ছাত্রীর মা বলেন, ওই নরপশু আমার মেয়ের তো সর্বনাশ যা করার করেছেই। সঙ্গে শরীরে সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা, সুই ও কলম দিয়ে খুচানোসহ নানা ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে। মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো। কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবো, এ কথা বলতেই তিনি কেঁদে ফেলেন।

ছাত্রীর পিতা বলেন, ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলে ভয়ে চিৎকার করে উঠছে। এ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। মানিকগঞ্জ বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি রোমেজা খান, ঔ নরপিচাশকে সর্বোচ্চ সাজা দিতে হবে। এরা যদি আবারও ছাড় পায় তাহলে আমাদের নারী সমাজের ওপর ওরা বার বার এ রকম অন্যায় করার সাহস পাবে। মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুর রহমান জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবুজের গাড়ি চালককে খোঁজা হচ্ছে। আর সবুজকে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি নিজে তদারকি করছি এবং দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, মেয়েটির লেখা পড়া যাতে বন্ধ না হয়ে যায় তার জন্য আমি ওকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। ছাত্রীর নিরাপত্তা ও আইনগত সব সহযোগিতা আমরা নিশ্চিত করেছি।

উল্লেখ্য, গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে বনানীর একটি ছাত্রীনিবাসের সামনে থেকে সবুজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে জোর করে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। এরপর নির্জন জায়গায় নিয়ে তার হাত পা বেঁধে গাড়ির ভেতরেই জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। পাশাপাশি শরীরের ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। গাড়ির চালক ধর্ষণ ও নির্যাতনের ভিডিও চিত্র তার মুঠো ফোনে ধারণ করে। পরে বিকালের দিকে অনেকটা বিবস্ত্র অবস্থায় সবুজ তাকে ছাত্রী নিবাসের সামনে ফেলে রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ ওয়্যারলেসগেটে এলাকার ঈশান মোটর নামের পার্সের দোকান থেকে সবুজকে আটক করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ধর্ষণ ও নির্যাতনের চিত্র ভিডিও ধারণ করা মোবাইল ফোনটি।



মন্তব্য চালু নেই