তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় অবৈধ!

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে যে রায় ঘোষণা করেছিলেন সেটি অবৈধ, তার প্রমাণ মিলেছে প্রধান বিচারপতির ভাষণে।

বুধবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে বারের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন- অবসরে যাওয়া বিচারপতিদের রায় লেখা সংবিধান পরপন্থি বা অবৈধ।’ এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান পরিপন্থি বলে যে রায় দিয়েছিলেন তার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই এটি অবৈধ। কারণ বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের রায় অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর স্বাক্ষর করেছিলেন।’

মাহবুব বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার উক্ত অবৈধ রায়ের সুযোগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেন।’

আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে যে সঙ্কট ও অস্থিরতা চলছে তার একমাত্র কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর এই বাতিলের পেছনে ভূমিকা রেখেছে এবিএম খায়রুল হকের সংবিধান পরিপন্থি উক্ত অবৈধ রায়।

এসময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুর্নবহাল করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে দাবি জানায় আইনজীবী সমিতি।

বারের সহ-সভাপতি মুক্তার কবির খান, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহ-সম্পাদক মাজেদুর রহমান পাটোয়ারি উজ্জলসহ বারের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বর্ষপূতি উপলক্ষে দেয়া বাণীর এক অংশে বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের মামলাজট নিরসনকল্পে বিদ্যমান অবকাশকালীন ছুটি কমিয়ে আনা ও যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তিকৃত মামলার রায় লেখা নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা স্বত্ত্বেও সহকর্মী সকল বিচারপতিগণকে এ বিষয়ে সম্মত করতে সমর্থ হইনি, এটা আমার ব্যর্থতা। কোনো কোনো বিচারক রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন, আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থি।’

বাণীতে তিনি আরো বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তার গৃহীত শপথও বহাল থাকে না। আদালতের নথি সরকারি দলিল। একজন বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর আদালতের নথি নিজের কাছে সংরক্ষণ, পর্যালোচনা বা রায় প্রস্তুত করা এবং তাতে দস্তখত করার অধিকার হারান। আশা করি বিচারকরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এমন বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’



মন্তব্য চালু নেই