তনু হত্যা : কী হলো এক বছরে

দেশব্যাপী বহুল আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২০ মার্চ। কিন্তু দীর্ঘ এক বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে তনুর ঘাতকরা। অনিশ্চিত গন্তব্যে যাচ্ছে এ মামলার ভবিষ্যত।

ঘটনার পর থেকে তদন্তকারী সংস্থা একাধিকবার পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে কুমিল্লা সিআইডি। ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার।

তনুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার জেলার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তনুর মা। কুমিল্লা গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেয়ার কথাও রয়েছে।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম ও বাবা ইয়ার হোসেন রোববার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। সেখান থেকে মুঠোফোনে তনুর মা জানান, তনুর কবর জিয়ারত ও মিলাদ পড়াতে বাড়িতে এসেও শান্তি নাই, বাড়িতেও গোয়েন্দারা আমাদের ফলো করছে।

তিনি বলেন, দেশে সকল হত্যার রহস্য বের হয়, তাদের সাজাও হচ্ছে। কিন্তু আমার মেয়ের (তনু) খুনিরা এখনো সনাক্ত ও গ্রেফতার হইলো না কেন? এখন সিআইডিকে কিছু বললেই তারা বলে, মিডিয়ায় এতো কথা না বলে চুপ থাকতে, বাড়াবাড়ি না করতে।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম আরও বলেন, গত এক বছরেও খুনিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। আমাদের জন্য আল্লাহ্ আছেন, দুনিয়াতে এ বিচার না পেলেও পরকালে মেয়ের হত্যাকারীদের শাস্তি হবেই।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার পর এর ফলাফল সম্পর্কে আমাদেরকেও কিছুই জানানো হচ্ছে না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি ঢাকায় আছি, মামলাটির তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে, তাই তদন্তাধীন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল।

তবে দীর্ঘ এক বছরেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রানু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের সনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে তনুর পরিবারসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই