তবুও হারেনি ঈশ্বর কুমার

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সাধারণত সমাজের বোঝা হয়েই সারা জীবন বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঈশ্বর কুমার সূত্রধর নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবেই গড়ে তুলছে। পারিবারিক ইতিবাচক ভূমিকা, নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, প্রচণ্ড পরিশ্রম, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। এখন সে পিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

মানুষের অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনো বাধা তাকে আটকে রাখতে পারে না। সে কথাই আবার প্রমাণ করল ঈশ্বর কুমার। ঈশ্বরের দুটি হাত অচল হয়ে পড়ায় বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সে তার দিদির বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দিদি ও ভগ্নীপতি রতন সূত্রধরের সহযোগিতায় লেখাপড়া শুরু করে। শারীরিক নানা বাধা উপেক্ষা করে সে শিক্ষাজীবনে প্রতিটি ক্লাসে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরের চোখেমুখে বড় হওয়ার স্বপ্ন।

সব বাধা উপেক্ষা করে এ অবস্থায় ওই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে মুখের ভেতর কলম নিয়ে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে লেখার অভ্যাস করে। এভাবেই সে ওই স্কুল থেকে এবার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হিসেবে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

ঈশ্বর কুমার জন্মের তিন বছর পর থেকে অজ্ঞাত রোগে তার দুই হাতের কবজি ও আঙুল শুকিয়ে যায়। জন্মের কয়েক মাস পরেই ঈশ্বরের মা কুন্তি রানী সাহা মারা যান। বৃদ্ধ বাবার ক্ষমতা নেই তার ভরণ-পোষণের।

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের প্রফুল্ল সূত্রধরের ছেলে ঈশ্বর কুমার সূত্রধর।

পারসোনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এবার পিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এই শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তার রোল নম্বর ১০৪৫৭।

ঈশ্বরের স্বপ্নপূরণের পথে সহযোগিতা করছেন তার দিদি রেবা রানী। তিনি নিঃসন্তান। দিদির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে ঈশ্বর।

ঈশ্বর বলে, ‘লেখাপড়া করে শিক্ষক হব।’ শিক্ষক হয়ে সবার মাঝে অক্ষরজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চায় ঈশ্বর।

উল্লেখ্য, ঈশ্বর কুমার প্রতিভাবান চিত্রাঙ্কন শিল্পীও। ইতিমধ্যেই তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। তার এই সংগ্রামী জীবনের প্রতি সবাই একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালে সে একদিন আলোর মুখ দেখতে পাবে।



মন্তব্য চালু নেই