তাজিয়া মিছিল ঘিরে হামলার আতঙ্ক

রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানের সামনে বোমা হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাজিয়া মিছিল ঘিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এখন মিছিল বের করা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে।

প্রতি বছর আশুরার দিনে মোহাম্মদপুরে জহুরী মহল্লা, জয়েন্ট স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্পসহ অন্যান্য ক্যাম্প ও মিরপুর-১১ নম্বরে মিল্লাত ক্যাম্প, রহমত ক্যাম্প, ওয়াপদা কলোনিসহ অন্যান্য ক্যাম্প এবং চকবাজার এলাকার হোসেনি দালান থেকে তাজিলা মিছিল বের হয়। এবারও সকালে মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি জায়গায় তাজিয়া মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও হোসেনি দালানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্কে তা এখনও বের হয়নি। তবে বিকেলের দিকে তাজিয়া মিছিল বের হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এ ছাড়া মিছিলে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সহায়তা করার কথা জানানো হয়েছে।

মিরপুরের মিল্লাত ক্যাম্পের প্রধান মো. হায়দার জানান, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সকলের মাঝেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে আমরা যথাসময়ে মিছিল বের করব।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আশুরায় নিরাপত্তার কথা জানিয়েছিলেন। আশুরা উপলক্ষে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার মাঝেও এধরনের ঘটনায় এখন অনেকটাই আতঙ্কিত এসব সম্প্রদায়ের লোকজন।

এদিকে দেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাজধানীতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়। এসব নিরাপত্তার মাঝেও চেকপোস্টে নিরাপত্তার দায়িত্বপালনকালে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে পুলিশের এএসআই খুন হন গত বৃহস্পতিবার। একের পর এক এধরনের ঘটনার পর এখন আশুরা উপলক্ষে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় তাজিয়া মিছিল বের করতে অনেকটা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় কোন গোষ্ঠী নাশকতার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে মিছিলে প্রবেশ করে ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। বিহারী ক্যাম্পগুলো ঘিরে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়। এ ছাড়া ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়া বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই একটি কুচক্রী মহল তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা চালিয়েছে। জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তবে বোমা বিস্ফোরণের পর শনিবার ভোরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হোসেনি দালানের সামনে তাজিয়া মিছিলে নাশকতা সৃষ্টির জন্যই হামলা চালানো হয়েছে। তবে এটি জঙ্গি হামলা নয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সেক্টর তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে আশা করি হামলাকারীরা শনাক্ত হবে।

এ সময় তিনি আতঙ্ক হওয়ার কারণ নেই জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। বোমা হামলার বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। নির্দিষ্ট সময়েই তাজিয়া মিছিল বের হবে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা সহায়তা করবেন। গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারিও থাকবে।

এদিকে বোমা হামলার পর থেকে ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় শুক্রবার গভীর রাতে বোমা হামলায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০০ জনের বেশি। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু লোককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই