তিন গ্রামের বাসিন্দা মাত্র চার পরিবার!

জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে সপ্তম। অন্যতম ঘনবসতি এ দেশ। গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ২০৩ জনের বাস। অথচ এই দেশেই এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে একটি মাত্র পরিবারের বাস। শুধু তা-ই নয় এমন তিনটি গ্রামের সন্ধান মিলেছে।

এ তিনটি জনবিরল গ্রামের অবস্থান নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নে। গ্রাম তিনটি হলো- জনার্দ্দনপুর, গঙ্গানগর এবং রামেশ্বরগাতি।

সম্প্রতি গ্রামটি তিনটি ঘুরে দেখা গেছে, জনার্দ্দনপুর গ্রামে একটি হিন্দু পরিবার, গঙ্গানগরে একটি মুসলিম পরিবার এবং রামেশ্বরগাতিতে একটি হিন্দু ও একটি মুসলিম পরিবার বসবাস করছে। ভোটার তালিকাতেও তাদের আলাদা গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

জনার্দ্দনপুর গ্রামে বসাবাসরত পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি কার্তিক চন্দ্র দাস (৬০) বলেন, ‘আমাদের এখানে (গ্রামে) একসময় বহু লোক বসবাস করতো। এটা ছিল হিন্দুদের গ্রাম। সাতচল্লিশে দেশভাগের সময় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় সব পরিবার চলে যায় ভারতে। আমাদের পরিবারটিই শুধু থেকে যায়।’

তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় আমরাও বাড়িছাড়া ছিলাম। যুদ্ধ শেষ হলে আবার নিজের ভিটায় ফিরে আসি। গ্রামে অন্যরা যারা চলে গেছে তাদের জমি আমরা কিনে রেখেছি। এখন শুধু এই গ্রামে আমাদের পরিবারটিই বসবাস করছে।

অতীতের কথা বলতে গিয়ে কার্তিক আরো বলেন, ‘আমরা (জনার্দ্দনপুর), গঙ্গানগর এবং রামেশ্বরগাতি পাশাপাশি এই তিনটি গ্রামের লোকজন বেশি বলেই একসময় আমাদের বাড়ির পাশে কাশিগঞ্জ নামে একটি বাজার ছিল। সেখানে একটি বিরাট বড় বটগাছ ছিল। আমাদের বাপ-দাদারা এখানেই বাজার করতো। আর এখন এই গ্রামগুলোতে লোকজনই নেই।’

এভাবে একা থাকা মানে তারা নির্ঝঞ্ঝাটে থাকতে পারছেন এমন নয়। বাইরের লোকেরা এসে তাদের শান্তি নষ্ট করছে।এই শান্ত নিস্তব্ধ গ্রামটির একমাত্র পরিবারটির অশান্তির কারণে হচ্ছে অন্য গ্রামের বাসিন্দারা। সমস্যার কথা বলতে গিয়ে কার্তিক বলেন, ‘আমাদের প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজর কম। বিদ্যুৎ নাই, আসার সম্ভাবনাও কম। পুকুরে মাছ ছাড়লে অন্যরা (অন্য গ্রামের লোক) ধরে নিয়ে যায়। আমাদের পৈতৃক কাজ পান চাষের জন্য প্রচুর বাঁশ প্রয়োজন। আর সেই বাঁশ, গাছ কেটে নিয়ে চলে যায়। প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হয়। যার ফলে নানান সমস্যা ও হয়রানির শিকার হই।’

জনার্দ্দনপুরের পাশেই গঙ্গানগর। যেখানে বাস করে মোকসেদ আলীর (৭০) পরিবার। তিনি এখানকার আদি বাসিন্দা নন। অন্যগ্রাম থেকে এখানে এসেছেন জমি কিনে। তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১০ জন। আশেপাশের গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলেও ছোট হওয়ায় এই গ্রামেও নেই বিদ্যুৎ।

মোকসেদ আলী কার্তিক দাসের কথারই পুনরাবৃত্তি করেন। তবে পার্থক্য এই- তারা কোনো রকম হয়রানির শিকার হোন না।

অন্যদিকে গঙ্গানগরের আরেক পাশে অবস্থান রামেশ্বরগাতি গ্রামের। এটিও একটি জনবিরল গ্রাম। একটি হিন্দু এবং একটি মুসলিম পরিবারের বাস এখানে।

রামেশ্বরগাতির বাসিন্দা মুহাম্মদ ফজু মিয়া বলেন, ‘আমরা দুটি পরিবার খুব মিলমিশ করেই বসবাস করি। সবাই কৃষি কাজ করে। দুই একজন ছোটখাট ব্যবসা করি। তেমন কোনো সমস্যা নেই আমাদের গ্রামে। তবে গ্রাম ছোট হওয়ায় নাগরিক সুবিধা কম। যেমন আশপাশের গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে অনেক আগেই, কিন্তু আমাদের এখানে আসার কোনো খবর-বার্তা নেই।’

লোকজন কম হওয়া যেমন সুবিধা তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। এই সুবিধা-অসুবিধা নিয়েই বাস করছে এই গ্রাম তিনটির চারটি পরিবার। দিনকে দিন সবার পরিবার বড় হচ্ছে। একদিন হয়তো তাদের সন্তান-সন্ততি দিয়েই মানুষে ভরে উঠবে গ্রামগুলো। হয়তো অন্য গ্রামের মানুষেরাও এসে পরিণত হবে জনবহুল গ্রামে; যেমনটা ছিল অতীতে। খবর বাংলামেইলের সৌজন্যে।



মন্তব্য চালু নেই