তিন মাসেও এডিপির কাজ শুরু করেনি একাধিক মন্ত্রণালয়

প্রতি অর্থবছরেই শতভাগ এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সরকার। কিন্তু কখনোই কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন হয় না। শতভাগ বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকলেও গত অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৯১ শতাংশ।

এবারো সেই পথে হাঁটছে সরকার। বছরের তিন মাস পরেও তিনটি মন্ত্রণালয় এখনো এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরুই করতে পারেনি। দুটি প্রতিষ্ঠান মাত্র কাজ শুরু করেছে, যদিও এসবের বাস্তবায়ন হার ১ শতাংশেরও নীচে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে মোট এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৭ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে (প্রথম তিন মাসের হিসাব) এডিপি বাস্তবায়ন হার কমেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয় ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৯ শতাংশ। এবার ২ শতাংশ হার কমেছে।

এমনকি টাকার অঙ্কেও বাস্তবায়ন কমেছে চলতি বছর। প্রথম তিন মাসে গত অর্থবছর ব্যয় হয়েছিল ৭ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। চলতি বছর এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়গুলো খরচ করতে পেরেছে ৬ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা।

আইএমইডির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তিনটি মন্ত্রণালয় কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন, পররাষ্ট্র এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এর বাইরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ গত মাস থেকে এডিপি বাস্তবায়ন শুরু করেছে। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটির এডিপি বাস্তবায়ন এখনো ১ শতাংশের কম। এগুলো যথাক্রমে দশমিক ২৮ এবং দশমিক ২৪ হারে এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।

বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা (পরিকল্পণা বিভাগ) ছাড়াও ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এডিপি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মাত্র ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১০ শতাংশ বা তার বেশি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।

সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (৩৭ শতাংশ)। যদিও চলতি অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ে ২টি প্রকল্পের জন্য ৫ কোটি ২৬ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিভাগটি ১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় করতে পেরেছে।

এরপর রয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় (২৪ শতাংশ)। চলতি অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ে ৫টি প্রকল্পের জন্য ২২৫ কোটি ৮৭ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট এডিপির চারশ’ ভাগের এক ভাগেরও কম। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়টি ব্যয় করেছে ৫৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে পরিকল্পণা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ খুব আন্তরিক। বিশেষ করে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বরাবরই কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত খোঁজ নেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

আইএমইডি সচিব বলেন, কোনো প্রকল্পে বিশেষ কোন সমস্যা থাকলে তার সমাধানে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানোর কারণে বাস্তবায়ন চিত্র পাল্টে যাবে বলে আশাবাদ করছেন আইএমইডি সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার।

এদিকে এডিপিতে শীর্ষ বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রথম দশটি সংস্থার বাস্তবায়ন অবস্থাও শোচনীয়। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে মোট এডিপির ৭৩ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। শীর্ষ দশ সংস্থার মধ্যে অন্যতম পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে সংস্থাটিকে ৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা মোট এডিপির ৩ শতাংশ।



মন্তব্য চালু নেই