পল্টন মোড় এক বিভীষিকার নাম

তীব্র যানজটে নাজেহাল নগরবাসী

“পল্টন মোড় এক বিভীষিকার নাম। যদি কোনো কাজে সকালে এই দিক দিয়ে গাড়িতে মতিঝিল যেতে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে এ মোড়েই আধাঘণ্টা ঠাঁয় বসে থাকতে হবে। সময়টা যদি বিকেলে বা সন্ধ্যা হয় তবে নিশ্চিত এক ঘণ্টার বেশি, আর যদি সময়ের এ অপচয় আধা ঘণ্টায় নামিয়ে আনতে চান তবে রাত ৯টার আগে এ মোড়ের নাম নেয়া যাবে না। অথচ ছুটির দিনে মোড়টি পার হতে দুমিনিটও লাগে না।”

পল্টন মোড়ের যানজট সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গিয়াস উদ্দিন। এ মোড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। আশেপাশে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। তাই কর্তব্যরত ট্রাফিকের পুলিশ এক পাশের গাড়ি আটকিয়ে অন্যপাশে ছাড়ার সময় পার হলাম দুজনে। এ সময় দেখলাম, যে পাশে গাড়ি পার হচ্ছে সে পাশে মধ্য বয়সী এক লোক সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে খেয়াল-খুশিমত পার হচ্ছেন। পুলিশের দিকে তাকালাম, দেখলাম তিনিও নির্বিকার, অসহায় এবং ভীত সন্ত্রস্ত চোখে চেয়ে আছেন।

ওই লোকের প্রসঙ্গ টেনে গিয়াস বললেন, দেখলেন তো কিভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। এই মোড়ে কোনো ফুটওভার ব্রিজও নেই। তাই বেশি তাড়া থাকলে গাড়ি চলাচলের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়।

তিনি জানালেন, মতিঝিলে কর্মস্থল হওয়ার সুবাদে দিনে অন্তত দুবার এ মোড় দিয়ে যাতায়াত করেন। যে দিন অফিসে তাড়াতাড়ি যেতে হয় সেদিন গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে মোড় পার হয়ে আবার রিকশায় বা অন্য গাড়িতে উঠেন। আর বেশি তাড়া থাকলে তিনিও এমন ঝুঁকি নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না।

একদিকে মতিঝিল, অন্যদিকে প্রেসক্লাব এবং আরেকদিকে সচিবালয়ের অবস্থানের কারণে পল্টন রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম প্রধান মোড় হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়া কমলাপুর, পুরান ঢাকা, সায়েদাবাদ, শাহবাগ, সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেতেও পার হতে হয় এ মোড়। আর সে মোড় পার হতেই সময়ের অপচয় হয় গড়ে আধা ঘণ্টার বেশি। প্রেসক্লাবের বাইরে বড় ধরনের সভা-সমাবেশ থাকলে আবার এ অপচয় এক থেকে দেড় ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকে। জটের কারণে এ মোড়ে দৈনিক বাংলা, সুপ্রিম কোর্ট এবং গুলিস্তান পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, মতিঝিল থেকে মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গাড়িগুলো পল্টনের জট এড়াতে ফকিরাপুল-নয়াপল্টন-কাকরাইল অথবা গুলিস্তান-সচিবালয়-সুপ্রিম কোর্ট হয়ে যাতায়াত করে।

পল্টন মোড়ের ট্রাফিক পুলিশদের ভাষ্য, অতিরিক্ত মানুষ ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে এ যানজট। এর কোনো সমাধান তাদের জানা নেই।

এই মোড়ে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ মো. মহসিন বলেন, এত মানুষ আর গাড়ি, যানজট না হয়ে উপায় কি?

তিনি জানান, শত চেষ্টা করেও এ মোড়ের জট উপশম করা যাচ্ছে না।

পল্টন মোড়ে আধা ঘণ্টা দাঁড়ালেই মহসিনের কথার সত্যতা মেলে। রাস্তার মাঝে শুধু গাড়ি আর মানুষ ছাড়া তিল ধারণের জায়গা নেই। অবশ্য মোড় দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারীরা এক অভিনব উপায়ে এ যানজটের সুরাহা করেছেন। তারা এ মোড়ের জন্যই আধা ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখেন। যদি তা সব সময় সম্ভব না হয়, তবে গিয়াসের মতো এক গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে পার হয়ে অন্য গাড়ি উঠেন।



মন্তব্য চালু নেই