তোপের মুখে ওবামা

ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা চুক্তি করায় তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ জন্য ওবামাকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নিজ দেশের রক্ষণশীলরা ও মার্কিন মিত্র ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতািনিয়াহু।

ওই চুক্তির বিরোধিতা করেছে দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রধান বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টিও। ফলে চুক্তিটি পাস করতে বেশ বেগ পেতে হবে ওবামাকে।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের আলোচনা এবং সর্বশেষ ১৮ দিনের ম্যারাথন বৈঠকের পর মঙ্গলবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় উপস্থিত দুপক্ষের প্রতিনিধিরা পরমাণু চুক্তির ঘোষণা দেন। চুক্তির উদ্দেশ্য হলো- ইরান তাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কমিয়ে আনবে। এ জন্য পশ্চিমাবিশ্ব তেহরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেবে।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসে। ২০০৬ সালে এটা শুরু হলেও তা কয়েক দিনের মধ্যে স্থগিত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে ফের আলোচনা শুরু হয়।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা জন বোয়েনার বলেছেন, এ চুক্তি শুধুমাত্র তেহরানকেই সাহসী করে তুলবে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর পরিবর্তে মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্র ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। এটা বিশ্বব্যাপি পরমাণু অস্ত্রের যুদ্ধে জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠমিত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদেশের ওই চুক্তির প্রথম থেকে বিরোধিতা করে আসছিল। চুক্তিটি সই হওয়ার পরপরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

তিনি চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক ভুল` বলে মন্তব্য করেছেন৷ শুধু তাই নয়, চুক্তির আওতায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে ইরান যে অর্থ পাবে তা দিয়ে তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। চুক্তিটি ‘ইসরাইলের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সমান` বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ চুক্তির ফলে সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দাবি সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে নির্বাচিত যুদ্ধবাজ সিনেটর লিন্ডসে, যিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

মঙ্গলবার এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার দেখা মতে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি পদক্ষেপ।’

তার ভাষায় পরমাণু চুক্তিকে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও সুন্নি আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মনে করেন তিনি।

লিন্ডসে বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে এখন মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’ ফলে ওই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করতে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

চুক্তিটি পাস করতে কংগ্রেসের হাতে ৬০ দিন সময় রয়েছে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা দিয়েছেন, চুক্তিটি কংগ্রেসে পাস হওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো বাধায় ভেটো দেবেন তিনি।

সমালোচকদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ওবামা বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে ইরানের জন্য পরমাণু অস্ত্র তৈরি সব পথ রুদ্ধ হয়েছে|’

মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া টিভি ভাষণে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এ চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব সুরক্ষিত ও আরো নিরাপদ হবে। এটা একটি শাসককে (ইরান) পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করার সুযোগ দিয়েছে। চুক্তিটি দেশটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের জন্য নয়, এটা দেশটিকে পরীক্ষা করার সুযোগ দিয়েছে।’

তথ্যসূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, নিউ ইর্য়ক টাইমস।



মন্তব্য চালু নেই