ত্বকীর খুনিরা এখন ভীত, বিচার অবশ্যই হবে : আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে তারা প্রশাসনিকভাবে আইনের আওতায় না গেলেও প্রকৃতিগতভাবে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। মহান সৃষ্টিকর্তা নিশ্চিই এই ভয়ঙ্কর খুনিদের রেহাই দেবেন না।’

আইভী বলেন, ‘সাত খুনের সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক রায় সারা বিশ্বে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ত্বকী হত্বার বিচার একদিন না একদিন হবেই। ত্বকীকে যারা খুন করেছে তারা এখন অনেকটাই ভীত। এক ত্বকীর বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষ খুনিদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।’

ত্বকী হত্যার চতুর্থবার্ষিকী স্মরণে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে শুক্রবার বিকালে নগরীর দেওভোগ নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মেয়র আইভী।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ত্বকী। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তবে শামীম ওসমান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সিটি মেয়র বলেন, ‘ত্বকীর খুনিরা এখন কাউকে খুন করার আগে ১০ বার চিন্তা করে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছে। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ ত্বকীকে যেমন চিনে তেমন ত্বকীর খুনিদেরও চিনে।’ ত্বকী হত্যার পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতা মিঠু, নাট্যকার চঞ্চল, ব্যবসায়ী আশিক, ভুলু সাহা হত্যার বিচারের দাবি জানান মেয়র আইভী।

মেয়র নারায়ণগঞ্জের মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একজন নারী সন্তান জন্ম ও লালন পালনের মতো কঠিন কাজ করেন। সেই মায়েরা যেন তাদের সন্তানদের ত্বকীর খুনিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস যোগান।’

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নাট্যজন মামুনুর রশিদ, ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সামসুল আলম আজাদ প্রমুখ।

নাট্যজন মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও সাত খুনের বিচার করেছেন। ত্বকীর খুনিদেরও বিচার করবে বিচার বিভাগ। কিন্তু সরকারের প্রভাবের কারণে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। প্রিয় শহর নারায়ণগঞ্জের সাথে আমার সম্পর্ক ১৯৬৫ সাল থেকে। একদা, শিল্প সংস্কৃতির শহর নারায়ণগঞ্জ খুন, সন্ত্রাস, চাদাঁবাজির কারণে সারা দেশে নেতিবাচক ইমেজ গড়ে উঠেছে। কিন্তু যে শহরে আইভীর মতো মেয়র সেই শহরের মানুষ যেকোনো অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে পারে।’

মামুনুর রশিদ বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারাদেশ প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন আইভী। খুনিরা শুধু ত্বকীর মতো শিশুকে খুন করেনি। খুন করেছে ত্বকীর মেধা, কল্পনাপ্রবণ মন ও কবিতাকে। এই শোক শুধু ত্বকীর পরিবারের নয় নারায়ণগঞ্জবাসী একজন মেধাবী সন্তানকে অকালে হারিয়েছে। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি হলে সারাদেশে শিশু হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে অনেকটা সহায়ক হবে।’

নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ত্বকীর খুনি চিহ্নিত পরিবারটি স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে একের পর এক খুন গুমের সাথে জড়িত। কিছুদির পরপর একজন খুন করে পরিবারটি নারায়ণগঞ্জে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। খুন করে মানুষকে দাবিয়ে রেখে তারা চাদাঁবাজি, ভুমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা ও টর্চার সেল (নির্যাতন কেন্দ্র) চালাচ্ছে। ত্বকীর খুনিরা এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শেষ মরণ কামড় দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঘাতক কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না। এটি ইতিহাসের শিক্ষা।’

ত্বকীর বাবা বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা র‌্যাব মামলার যে খসড়া অভিযোগপত্র গণমাধ্যমে দিয়েছে তাতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তার টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। এখন তদন্তকারী সংস্থার উচিত আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়ার ব্যবস্থা করা। আজমেরী কার নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করেছে, ত্বকী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কে, তা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার আগেই উদঘাটন করা উচিত। যেমন সাত খুনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পাওয়া যায়নি। এতে সাত খুনের মামলার পরিকল্পনাকারীর নাম বিচারের আওতায় বাইরে রয়ে গেছে।’

রফিউর রাব্বী বলেন, ‘ত্বকী মঞ্চের গত চার বছরের আন্দোলন ত্বকীর ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনা এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা। আমরা আমাদের সন্তানদের একটি নিরাপদ ভূমিতে রেখে যেতে চাই। যা ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমাদের সন্তানদের চিন্তায় চেতনায় কোনো দাসত্ব যেন না থাকে।’

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক, খ , গ বিভাগে তিন শতাধিক শিশু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ক বিভাগের সেরা ১০, খ বিভাগে পাঁচ, গ বিভাগে সেরা পাঁচ বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই