থমকে আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-মিয়ানমার রেলপথ নির্মাণ

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি বিশেষ আগ্রহের প্রকল্প।

ধুমধাম করে পাঁচ বছর আগে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ সময়ে শেষ হয়েছে শুধুমাত্র সম্ভাবতা যাচাই আর মাঠ পর্যায়ের কাজ। পরবর্তীতে আর কাজ এগোচ্ছে না শুধুমাত্র অর্থের অভাবে।

সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের কক্সবাজার যাতায়াতে বিমান ও সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও রেলপথ নেই। এছাড়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ চালু করতে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ট্রেন সংযোগ দরকার। তাই ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রকল্পে প্রধান অর্থসহায়তা করার কথা ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)। কিন্তু পাঁচ বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬৬১ শতাংশ। এই অবস্থায় নতুন করে অর্থায়নের বিষয়ে কিছু জানাচ্ছে না সংস্থাটি। এমনকি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে এ প্রকল্পের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পণা কমিশনে জমা আছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১০ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসেই প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে নানা জটিলতায় শুরু হয়নি এর নির্মাণকাজ।

এরপর ২০১২ সালে রেলপথটি নির্মাণে পুনরায় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটির প্রথম দফায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। অনুমোদনের সময় পুরো রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

পরবর্তীতে রেলপথটি ডুয়াল গেজে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়। ডুয়াল গেজ রেলপথের জন্য বর্তমানে জমি অধিগ্রহণ আরো বাড়ছে। এছাড়া জমির দামও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এতে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ কাজ শুরু না করতেই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৬৬১ শতাংশ।

যদিও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১০ সালে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় অনেকটা ধারণার ভিত্তিতে। এজন্য নতুন করে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহণে অনেকটা ব্যয় বেড়ে গেছে। আবার মিটার গেজের পরিবর্তে ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কারণে প্রকল্প ব্যয় এতটা বাড়ছে।

তবে রেলপথের নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এ রেলপথে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর জমি অধিগ্রহণের টাকা বাদ দিলে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ঈসা-এ-খলিল বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফা সার্ভে জমা দিয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

এডিবি’র অর্থায়নে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের সম্বাব্যতা যাচাই শুরু হয় ২০১৩ সালে। এতে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করে কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যানারেল কোম্পানি। সহায়তা করে জার্মানির ডিবি ইন্টারন্যাশনাল, অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ও বাংলাদেশের এসিই কনসালট্যান্ট। চলতি বছর জানুয়ারিতে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। আর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় গত মাসে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রকল্পটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়নও প্রায় শেষদিকে।

কিন্তু এখনও এ প্রকল্পের অর্থায়নের উৎস নির্ধারিত হয়নি। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদনের সময় এডিবি প্রকল্পটিতে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এডিবি অর্থায়ন করবে কি-না, তা নিশ্চিত নয়। আবার প্রকল্পটির অর্থায়নে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়। জিটুজি ভিত্তিতে চীন সরকারের অর্থায়নে রেলপথ নির্মাণে আগ্রহ দেখায় কোম্পানিটি। কিন্তু এমওইউ সইয়ের পর আর কোনো প্রস্তাব দেয়নি চীনা প্রতিষ্ঠানটি।

দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে এখনো প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য শতাংশ। নতুন হিসাবে ২০২০ সালের জুনে রেলপথ নির্মাণ শেষ হতে পারে।

প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার ও রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ রুটের উল্লেখযোগ্য স্টেশনগুলো হচ্ছে, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও গুনদুম।



মন্তব্য চালু নেই