থানায় আটকে স্বামীকে নির্যাতন, স্ত্রীকে এসআইয়ের কুপ্রস্তাব

বরিশালে খোড়া অযুহাতে আটকের পর এক দম্পতিকে টানা তিনদিন থানা হাজতে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। আর স্বামীকে ছেড়ে দেয়ার শর্ত হিসেবে স্ত্রীকে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ করা হয়েছে।

নির্যাতনের এক পর্যায়ে মরিয়ম আক্তার (২৫) নামে নারীকে দেয়া হয় কুপ্রস্তাব। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার এ প্রস্তাবে তিনি অস্বীকৃতি জানালে তার স্বামীর ওপর নেমে আসে ফের নির্যাতনের খড়গ। দফায় দাফায় চালানো নির্যাতনে বেশ কয়েবার থানা হাজতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন ওই নারীর স্বামী রাজু জমাদ্দার (৩০)।

এরপর মঙ্গলবার তাদের অস্ত্র এবং মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোপর্দ করা হয়েছে আদালতে। এ অভিযোগ বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার সর্বাধিক বির্তাকিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই দম্পতিকে পুলিশ অত্যন্ত গোপনীতার সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করলেও নির্যাতনের বিষয়টি ঘটনাচক্রে ফাঁস হয়ে যায়। এমনকি পুলিশের এ ধরনের অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা আদালতের গারদখানায় থাকা আসামিদের মধ্যে জানাজানি হয়ে তারও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

পুলিশের ভেতরকার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, থানা হাজতে আটকে নির্যাতনের ঘটনা খোদ পুলিশের একাধিক অফিসারের বিবেককে জাগ্রত করলেও কেউ বলার সাহস পায়নি। কারণ নির্যাতনকারী এসআই দেলোয়ার হোসেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাখায়াত হোসেনের খাস লোক হিসেবে সকলের কাছেই পরিচিত। তাছাড়া দেলোয়ারের সঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সৈবাল কান্তি চৌধুরীরও রয়েছে গভীর সখ্যতা। সঙ্গত কারণে এ ধরনের অভিযোগ এ পুলিশ কর্মকর্তা কেয়ারই করছেন না।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই দেলোয়ার বলছেন, রাজু জমাদ্দার একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তার স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আদালতে সোপর্দের পরে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালতের বিচারকের কাছেও পুলিশি নির্যাতনের বিষয়টির বর্ণনা দিয়েছেন এ দম্পতি।

এরআগে এ দম্পতি আদালতের গারদখানায় থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছেও এসআই দেলোয়ার হোসেনের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। এমনকি তাদের শারীরে একাধিক আঘাতে ফুলা-জখমের চিহ্নও দেখান।

এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বেগম সাংবাদিকদের জানান, গত রোববার রাতে তার স্বামী অটোরিকশা চালক রাজু জমাদ্দারকে এসআই দোলোয়ার নগরী থেকে আটক করেন। এ সময় বলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ওই রাতেই তাকে (মরিয়ম আক্তার) থানায় খবর দেয় এ পুলিশ কর্মকর্তা। খবর পেয়ে নগরীর ভিআইপি কলোনির বাসা থেকে থানায় ছুটে যান স্ত্রী মরিয়ম। এ সময় তাকে হঠাৎ লাথি এবং চড় মারেন এসআই দেলোয়ার। পরবর্তীতে স্বামীকে ছেড়ে দেয়ার শর্তজুড়ে দিয়ে থানা হাজতে ঢুকিয়ে দেয়া হয় কুপ্রস্তাব। কিন্তু এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দেয়া হয় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি। অবশ্য যা বললেন তাই কাজে দেখালেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

গত তিনদিন আগে এ দম্পতিকে আটক করলেও মামলায় বলেছেন সোমবার রাতে নগরীর শিতলাখেলার মোড় থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে স্বামী রাজু জমাদ্দারকে গুলিভর্তি পাইপগানসহ এবং স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে ইয়াবা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন। যদিও ওই আদালতের বিচারক নুসরাত জাহান তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার (এসি) আনছার উদ্দিন বলেন, তিনি যতদুর শুনেছেন রাজু জমাদ্দারকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। আর তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। তবে স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে কেন ইয়াবা মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হলো এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।

তবে তিনদিন থানায় আটকে রাখার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী এসআই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান আনছার উদ্দিন।



মন্তব্য চালু নেই