দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের ৪ লাখ চাকরিতে বিদেশিরা

তিন ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতার অভাবে দেশের বিভিন্ন খাতে প্রায় চার লাখ বিদেশি কাজ করছে বলে একটি হিসাব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জামালখানে চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) ব্যবসায় অনুষদের নতুন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ‌্য জানান।

‘কমিউনিকেট করতে না পারা, কম্পিউটার স্কিল না থাকা ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ক্ষমতা না থাকা’- এ তিন ক্ষেত্রে দক্ষতায় দেশের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে বলে মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক মান্নান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, জ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। মাঝে মাঝে সরলরেখায় না হয়ে সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে সে পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের সাথে যদি তাল মেলাতে না পার তাহলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাবে।

যে চার লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছেন, তার অধিকাংশই অবৈধভাবে চাকরি করছে বলে জানান তিনি।

“১৭ হাজার লিগ্যাল। তাদের ওয়ার্ক পারমিট আছে। বাকি সবাই বেআইনিভাবে কাজ করছে। চার লাখ মানুষ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশের ৮০ লাখ মানুষ বিদেশে কাজ করে গত বছর ১৩০০ কোটি ডলার পাঠিয়েছিল বলে তথ‌্য তুলে ধরেন ইউজিসি চেয়ারম‌্যান।

“চিন্তা করেন কেন হচ্ছে? ফিলিপিন্স থেকে ৩০ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে। তারা আমাদের তিনগুণ বেশি রেমিটেন্স পাঠায়। আমাদের আয় তাদের এক-তৃতীয়াংশ।”

“আমাদের শিক্ষার্থীরা বাংলায় বা ইংরেজি কোনোটাতেই কমিউনিকেট করতে পারে না। কম্পিউটারে উচ্চতর কোনো দক্ষতা নাই। আবার পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করতে পারে না,” বলেন তিনি।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো বাইয়ার (ক্রেতা) আসলে প্রেজেন্টেশন দিতে পারে না। তাকে বোঝাতে পারে না, তার প্রোডাক্ট কিনলে ক্রেতার কী লাভ।”

দেশের বিভিন্ন খাতে শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা কাজ করছে বলে জানান তিনি।

অধ‌্যাপক মান্নান বলেন, “আমার এক ছাত্রের গার্মেন্টে প্রায় ৫০ হাজার লোক কাজ করে। সেখানে ওয়াশিং প্ল্যান্ট সুপারভাইজার হিসেবে হন্ডুরাসের এক নাগরিককে উচ্চ বেতনে আনতে হয়েছে। কারণ জিনসে যদি ওয়াশিংটা ভালো না হয়, তাহলে অর্ডার হারাতে হবে।”

তাই দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের নিজ থেকে শেখার তাগিদ অনুভব করার পরামর্শও দেন তিনি।

“যত দামি গাড়িই চালু হতে স্পার্ক লাগে। স্পার্কপ্লাক স্পার্ক করলে ইঞ্জিন স্টার্ট হয়। তারপর গাড়ি চলতে শুরু করে। শিক্ষকের কাজ হল স্পার্ক করে দেওয়া।”

প্রযুক্তির বদৌলতে জগত যে মুঠোর মধ্যে এসে গেছে সেটার সম্পূর্ণ সুবিধা আদায় করতে সবাইকে আরও দক্ষ হয়ে ওঠার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশের ১৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত ৩২ লাখ শিক্ষার্থীকে দক্ষ মানবসম্পদ করে গড়ে তোলার উপার জোর দেন ইউজিসি চেয়ারম‌্যান।

সিআইইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নুরুল আবসার নাহিদ, অনুষদ উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম. আইয়ুব ইসলাম ও প্রক্টর রশিদ এ চৌধুরী।



মন্তব্য চালু নেই