দর বেঁধে না দিলে চামড়া পাচারের শঙ্কা

প্রতিবছরের মতো এবারও চামড়ার দর বেঁধে না দিলে তা পাচার হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা।

তবে এতে ভিন্নমত পোষণ করছেন ট্যানারি মালিকরা। তারা জানান, প্রতি বছর চামড়ার দর বেঁধে দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সে দামে কাঁচা চামড়া কেনা হয় না। বিভিন্ন কারণে এতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

তারা জানান, গত বছরের বহু চামড়া এখনো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম অব্যাহতভাবে কমছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি এলসিও বাতিল করেছে। তাই রপ্তানিতে এবার ভাটা পড়তে পারে। তাই এবার দরকষাকষির মাধ্যমেই কাঁচা চামড়া কিনতে চান ট্যানারি মালিকরা।

দামের বিষয়ে ট্যানারি ও আড়ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠন বিএলএলএফইএ ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আলোচনায় বসবেন।

ফিনিসড লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল হোসেন জানান, কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়। তারা কম দামে কিনলেও বিক্রি করতে এসে বলে নির্ধারিত দামেই কেনা। তাই দাম নির্ধারণ না করাই ভালো। অন্যদিকে বেঁধে দিলে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সে দামে বিক্রি হয় না। তাই বেশিরভাগ চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ না করলে তা পাচার হয়ে যাবে।
কারণ সঠিক দাম পাবে কি না, তা নিয়ে বিক্রেতারা শঙ্কায় থাকেন।

গত বছর ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নির্ধারণ না করার দাবি জানালেও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দাম নির্ধারণ করে দেন। গত বছর প্রতি বর্গফুট ভালো চামড়া ১০০ টাকা থেকে শুরু ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে আগের বছরের ৫০ শতাংশ চামড়া মজুত পড়ে থাকায় লোকসানে আছি। তার ওপর আবার দাম নির্ধারণ করে দিলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা চাই না দাম নির্ধারণ হোক। যে যেই দামে পায় কিনবে।

বর্তমানে রাজধানীর কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত লালবাগের পোস্তায় বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ভালো চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, যা গত বছর কোরবানির পর ছিল ১৩০ টাকা। মাঝারি মানের চামড়ার দাম গত বছর ৯০-১০০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। আর নিম্নমানের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৬০-৭০ টাকা।

এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হবে কি না, এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই