দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন: দলের জবাবদিহিতা বাড়বে

সবশেষ আলোচিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কাগজে কলমে নির্দলীয় হলেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মেয়র থেকে কাউন্সিলর পর্যন্ত-প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রার্থী সমর্থন দিয়েছে এবং তাদের পক্ষে জোর প্রচারেও নেমেছে। ভোট শেষে মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদে কোন দল থেকে কতজন পাস করেছেন, সে হিসাব নিতেই ব্যস্ত ছিল গণমাধ্যমগুলো।

এই মেয়র এবং কাউন্সিলরদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকেই জবাবদিহি করতে হবে আগামী নির্বাচনে।

কেবল সিটি করপোরেশন নয়, উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই। আর ভোট শেষে মেয়র, চেয়ারম্যান কাউন্সিলর পদে কোন দলের সাফল্য বেশি, সে হিসাব মেলাতেই ব্যস্ত থাকে সমর্থকরা।

দিনে দিনে এভাবে নির্দলীয় নির্বাচন দলীয় রূপ নিয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হলে তাকে জাতীয় নির্বাচনের মতোই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় গণমাধ্যমেও। পার্থক্য কেবল জাতীয় নির্বাচনে নিবন্ধিত প্রতিটি দলের সব আসনেই একটি মার্কা থাকে, আর এসব নির্বাচনে লটারির ভিত্তিতে মার্কা পান প্রার্থীরা। তবে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এই দ্বিচারিতা থাকবে না। সারা দেশেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য দলের মনোনীত প্রার্থীরা একই প্রতীকে নির্বাচন করবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমনটা হলে তৃণমূল পর্যায়েও কেন্দ্রের মতো রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতা বাড়বে। এছাড়া কেন্দ্রে রাজনৈতিক সরকার আর স্থানীয় সরকারে অরাজনৈতিক সরকার-দুটো গণতন্ত্র বিকাশের পথে বাধা বলেই মনে করেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা বাড়বে। দলের মধ্যে দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। অতীতে দেখা গেছে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষ হলে রাজনৈতিক দলগুলো সে দায় অস্বীকার করতো। এখন তারা তা পারবে না।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা তৃণমূল পর্যায়েও গণতন্ত্র পৌঁছে দিতে চাই। স্থানীয় সরকারকে আরও বেশি জবাবদিহিমূলক করার উদ্দেশ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই আইনটা পাস করে ভালো হয়েছে। আগেও রাজনৈতিক দলের মধ্যে লড়াই হতো, এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূ পাবে।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘এর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর দায় এড়ানোর সাংস্কৃতি থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে। অতীতে দেখা গেছে রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা বিভিন্ন অপকর্ম করলে দল তার দায় নিতে অস্বীকার জানাতো। এখন আর তার উপায় থাকবে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এর মাধ্যমে তৃণমূলে নেতৃত ¡বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয়ভাবে যিনি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি নির্বাচনের সুযোগ পেলে সেটা এলাকার জন্য ভালো হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

তবে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের উদ্যোগের বিরোধিতা করছে বিএনপি। দলটির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলছেন, এই সিদ্ধান্তে দেশে বিভেদ আরও বাড়াবে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামও। সংগঠনটির মহাসচিব মোর্শেদ আলম বলেন, এর মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন ব্যাহত হবে। কারণ স্থানীয় নেতারা উন্নয়নের আগে দলীয় মতামতকেই প্রধান্য দেবে।

তবে জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এদের আশঙ্কার সঙ্গে একমত নন। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক বিরোধিতার সংস্কৃতির কারণে বিরোধিতা করছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘বিএনপির এমন অবস্থান স্ববিরোধী। নির্দলীয় নির্বাচনেও বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী সমর্থন করেছিল।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপির এ অবস্থান স্ববিরোধী। কারণ তারাতো অতীতে আইন ভঙ্গ করে দলীয়ভাবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল এখন যখন সরকার আইন করছে তখন তার বিরোধিতা করছে। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই